বার্তা প্রতিবেদকনিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত রীতিমত বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে উপজেলা নির্বাচনে লড়ছেন তৃণমূলের নেতারা। ভোট নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও বিএনপির অন্তত ৩৮ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন। এই ৩৮ জনের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের পদধারী নেতা। দল থেকে নির্দেশ দেয়ার পরও কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। তারা বলছেন, ভোটারদের আগ্রহে তারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন।
আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে সারা দেশের ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে। আর আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে ১৬০ উপজেলায় নির্বাচন হবে। দ্বিতীয় ধাপেও বিএনপির অন্তত ৩৫ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে দলের থানা-উপজেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী নেতা রয়েছেন।
প্রথম ধাপে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির যেসব নেতারা প্রার্থী হয়েছেন-সরাইল উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে আছেন উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি হানিফ আহমেদ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জেলা জিয়া পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীমা আক্তার। ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শামসুর রশিদ, ফুলপুর পৌরসভার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমরান হাসান, হালুয়াঘাটে ময়মনসিংহ উত্তর জেলার সদস্য আবদুল হামিদ, পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফায়জুল কবির তালুকদার, ফরিদপুর সদরের সাবেক সভাপতি রউফ উন নবী ও যুবদলের সাবেক নেতা কে এম নাজমুল ইসলাম, সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার সভাপতি নগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জে জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নাজমুল আলম, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার আহ্বায়ক রমিজ উদ্দিন, নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের সাবেক নেতা আশরাফ হোসেন ও ভোলাহাটের আহ্বায়ক বাবর আলী বিশ্বাস, সিলেটের বিশ্বনাথের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সুহেল আহমদ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গৌছ খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেবুল মিয়া, যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা সফিক উদ্দিন, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার সহসভাপতি সারওয়ার হোসেন, নাটোরের নলডাঙ্গার সাবেক সদস্য সরদার আফজাল হোসেন, নাটোর সদরে জেলার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন মৃধা, নওগাঁর, ধামইরহাটে আয়েন উদ্দিন, মহাদেবপুরে দলের সহসভাপতি আবদুস সাত্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন নির্বাচন করছেন।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া ফরিদপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রউফ উন নবী বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আমি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছি।’ ফরিদপুর যুবদলের সাবেক নেতা কে এম নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে স্বতন্ত্রভাবে। আওয়ামী লীগও দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেয়নি, তাই আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছি। আমার এখন দলীয় কোনো পদ নাই, তাই দলের দিকে থেকে নির্বাচন করতে কোনো বাধাও নেই।’
প্রথম ধাপে বিএনপির প্রায় অর্ধশত নেতা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন নীতিনির্ধারকেরা। কারণ, প্রথম ধাপের নির্বাচনে প্রার্থীদের ফেরানো না গেলে পরের ধাপগুলোতে প্রার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে, তাতে দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।উপজেলা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়া নেতাদের প্রতি একটি বার্তা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে ভুল করেছে বিএনপি। তিনি বলেন, ‘বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে না এসে যে ভুল করেছে, উপজেলা নির্বাচনে না করলে তাদের সেই ভুলের জন্য খেসারত দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম ধাপে বহু বিএনপির নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মানছেন না। এটি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তৃণমূলের বার্তা। এটি বুঝতে ভুল করলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অচিরেই টের পাবে রাজনীতিতে কতটা সংকুচিত।’
