প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জনগণের পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক

যদিও সুখ আপেক্ষিক বিষয়, তবুও সুস্থতার সাথে এর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এজন্য ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’ প্রবাদের প্রচলন হয়েছে। একজন মানুষের পুরো কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য তার সুস্থ থাকা জরুরি। সুস্থ মানুষের মনে ভালোলাগা কাজ করে বলেই যেকোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ পারিবারিক, সামাজিক  ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম। অসুস্থ মানুষের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যায় না।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিকিৎসাকে মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে। গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মানসম্মত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ  করা হয়। জনমুখী এ কার্যক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। গ্রামীণ জনসাধারণের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়াই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন বাংলাদেশ সরকারের একটি অনন্য উদ্যোগ। এই উদ্যোগ চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশে বর্তমান ১৪ হাজার ২২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। মানুষ এসব ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ২৭ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। 

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে তিনজন সেবাকর্মী আছেন। মূল দায়িত্বে রয়েছেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। সিএইচসিপি সপ্তাহে ছয় দিন ক্লিনিকে সেবা দেন। তাঁকে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাঠকর্মী, যিনি স্বাস্থ্য সহকারী হিসাবে পরিচিত। তিনি তিন দিন ক্লিনিকে উপস্থিত থেকে সেবা দেন। এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠকর্মী বা পরিবার কল্যাণ সহকারী তিন দিন ক্লিনিকে সেবা প্রদান করেন। সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত সপ্তাহে ছয় দিন (শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার) সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক খোলা থাকে।

কমিউনিটি ক্লিনিকে মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা, প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। প্রতিটি ক্লিনিকে শিশু ও মায়েদের টিকাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। ক্লিনিকে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করা হয়। এই ক্লিনিকে স্বাস্থ্যশিক্ষার পাশাপাশি পুষ্টিশিক্ষা, বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রসবে সহায়তা, জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধীকরণ, জটিল রোগের রেফারেল সেবা ও শিশুদের অণুপুষ্টিকণার প্যাকেট প্রদান করা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধুর মতো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে গড়ে উঠেছে। সব কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে জনগণের দান করা জমিতে। সরকার ভবন নির্মাণ, সেবাদানকারী নিয়োগ, ঔষধসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ সরবরাহ করছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য সমাজের প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নিয়ে ১৩-১৭ সদস্য-বিশিষ্ট (এর মধ্যে অন্তত ৪ জন মহিলা) একটি কমিউনিটি গ্রুপ আছে। এই পরিচালনা গ্রুপের সভাপতি হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ওর্য়াডের নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বার এবং সহ-সভাপতি হচ্ছেন জমিদাতা। কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা ও জনগণকে এখান থেকে সেবা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে প্রতিটি কমিউনিটি গ্রুপকে সহযোগিতার জন্য ১৩-১৭ সদস্য বিশিষ্ট ৩টি সাপোর্ট গ্রুপ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনিয়নের সব কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমকে গতিশীল ও টেকসই করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২০১৮ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট বিল’ পাশ হয়। ২০১৮ সালের ৮ই অক্টোবর আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এই আইনের বলে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট’ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বর্তমান এই ট্রাস্টের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহ পরচালিত হচ্ছে।

দিনদিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বিবেচনা করে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হবে এমনটাই সকলের প্রত্যশা।

(পিআইডি ফিচার)

                                            লেখক : সহকারী তথ্য অফিসারআঞ্চলিক তথ্য অফিসরংপুর

  • Related Posts

    রংপুরে দুই দিনব্যাপী তথ্যমেলার উদ্‌বোধন

    তথ্যই শক্তি জানব জানাবো, দুর্নীতি রুখবো স্লোগানে রংপুরে দুই দিনব্যাপী তথ্যমেলার উদ্‌বোধন করা হয়েছে। রবিবার (২২শে ডিসেম্বর) বিকালে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বেলুন উড়িয়ে এই…

    Continue reading
     রংপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৪ উদ্‌যাপিত

    ‘প্রবাসীর অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ, আমাদের সবার’ এই প্রতিপাদ্যে রংপুরে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস ২০২৪ উদ্‌যাপিত হয়েছে। বুধবার (১৮ই ডিসেম্বর) সকালে রংপুর জেলাপ্রশাসন, জেলা কর্মসংস্থান ও…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি