নিজস্ব প্রতিবেদক
যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ ও অন্য চারটি দেশ থেকে আমদানি করা পোশাক পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে তীব্র বিরোধিতা করেছে। তাদের মতে, শেষ পর্যন্ত ভোক্তারাই বাড়তি দাম বহন করে।
আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ), ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশন (এনআরএফ), রিটেইল ইন্ডাস্ট্রি লিডার্স অ্যাসোসিয়েশন (আরআইএলএ) এবং ইউনাইটেড স্টেটস ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (ইউএসএফআইএ) গত ২৫ মার্চ ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের (ইউএসআইটিসি) চেয়ারম্যান ডেভিড জোহানসনকে লেখা এক চিঠিতে এই কথা জানিয়েছে।
এএএফএ হচ্ছে পোশাক, জুতা এবং অন্যান্য তৈরি পোশাক আমদানিকারক এবং তাদের সরবরাহকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় বাণিজ্য সমিতি। আরআইএলএ হ'ল শীর্ষস্থানীয় খুচরা বিক্রেতাদের সমিতি এবং ইউএসএফআইএ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত টেক্সটাইল এবং পোশাক ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা, আমদানিকারক এবং পাইকারি বিক্রেতাদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বিশ্বব্যাপী ব্যবসা করে। চিঠিতে পোশাক আমদানিতে শুল্কের হার বাড়ানোর পদক্ষেপের সঙ্গে জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করে সংগঠনগুলো।
চিঠিতে বলা হয়, অন্য যে কোনো খাতের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র পোশাক পণ্যের ওপর বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত দেশীয় শুল্ক আরোপ করে এবং উৎস দেশগুলোর ব্যয় প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম, ওভেন শার্ট, ওভেন প্যান্ট, টি-শার্ট, অ্যাক্টিভ ফ্লিস এবং বেসিক সোয়েটারের মতো পণ্য রফতানি করে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট পোশাক আমদানির ৯ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ।
পোশাক পণ্য বাদ দিয়ে জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) এর আওতায় শুল্কমুক্ত সেবার অযোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এই পাঁচটি দেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন যে এই অঞ্চলগুলো এবং অন্যান্য দেশের পোশাক পণ্যগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক আরোপ করা উচিত, আমরা দৃঢ়ভাবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি।’
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তারা মার্কিন ব্যবসায়ী এবং আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য ব্যয় বৃদ্ধি করেছে, বিদেনি রফতানিকারকদের জন্য নয়।’ নেতৃবৃন্দ বলেন,‘ প্রশাসন যদি কোনো একক দেশের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর ইচ্ছার ব্যাপারে আন্তরিক হয়, তাহলে অন্য উৎস দেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করা হিতে বিপরীত হবে।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া এবং পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সদস্যরা জানিয়েছেন যে এই দেশগুলোতে সুপ্রতিষ্ঠিত টেক্সটাইল শিল্প রয়েছে, যেখানে উচ্চ দক্ষ শ্রমশক্তি এবং উন্নত প্রোডাকশন ক্ষমতা আছে।
এদিকে, তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এটি হবে বাংলাদেশে প্রথম কোনো মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সফর। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের মধ্যে থাকবে বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ। আগামী ২১ এপ্রিল তাদের বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে।
এ সফরে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ছাড়াও শ্রম আইন সংস্কার, তথ্য আইনের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২১ এপ্রিল ঢাকায় আসবেন ব্রেন্ডান লিঞ্চ। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র শ্রম অধিকারের বিষয়ে সবচেয়ে জোর দেবে। তাই সেভাবেই ঢাকাও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) নিয়ে বৈঠক করবে বলেও জানা গেছে।