নিজস্ব প্রতিবেদন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন (এমএসসি) ২০২৪ এ বিপুলভাবে অভিনন্দিত হয়েছেন এবং একইসঙ্গে তিনি একাধিক রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে কথা বলেন। বিশ্বনেতাদের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও তার নানা ফোরামে কাজের ধরণগুলো প্রশংসিত হয়েছে।
সরকার গঠনের পর এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের মধ্যে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুননির্বাচিত হওয়ায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এরপরেও আন্তর্জাতিক পরিসরে নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার আর কোন সুযোগ নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়ন বিষয়ে এই সম্মেলনে যেভাবে বিশ্বনেতারা আগ্রহ দেখিয়েছেন সেটা প্রশংসনীয়। বিভিন্নভাবে নেতিবাচক উপস্থাপনের যে চেষ্টা বিরোধীদল করেছে এখন আর সেই অবকাশ নেই।
প্রথমদিনেই তিনি সাইডলাইনে ডেনমার্ক এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাথে বৈঠক করেছেন।মিউনিখের হোটেল বেইরিশার হফ-এ সম্মেলন স্থলে শেখ হাসিনা ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল রহমান আল-থানির সাথে বৈঠক করেন। কনফারেন্স ভেন্যুতে তিনি মেটা গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এর প্রেসিডেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের উপ-প্রধানমন্ত্রী স্যার নিক ক্লেগ এবং বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড পার্টনারশিপের সিনিয়র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যাক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস আধানম ঘেব্রেইসাসের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
এর আগে, উইমেন পলিটিক্যাল লিডারস (ডব্লিউপিএল) এর সভাপতি সিলভানা কোচ-মেহরিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে তারা পারস্পরিক ও বৈশ্বিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘে ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোসহ ৭০টিরও বেশি দেশ এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ড. হাছান মাহমুদ জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে ব্যাপক আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। তারা (বিশ্ব নেতারা) তাঁকে (প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায়) অভিনন্দ জানিয়েছেন এবং তিনি (শেখ হাসিনা) এমএসসি-২০২৪-এর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন।’ প্রথমদিনেই শেখ হাসিনা ৭টি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক, প্রেসিডেন্ট অভ উইমেন পলিটিকাল লিডারস, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ‘মেটা’র গ্লোবাল চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের সামনে ছয়টি প্রস্তাব পেশ করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির জন্য জলবায়ু অর্থায়ন ছাড় করার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য তহবিলকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অর্থহীন অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্পদের সংস্থান করা দরকার। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মানবতার অস্তিত্ব যখন হুমকির মুখে পড়বে, তখন সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার পথ অনুসরণ করলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না।"
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) আবদুর রশীদ বলেন, ‘বিশ্বনেতাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই গ্রহণযোগ্য। তার বিভিন্ন স্পষ্ট বক্তব্য ও বাংলাদেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন সমাদৃত হয়ে আসছে। মিউনিখের সম্মেলনে তিনি যখন যোগ দেন তখন বিশ্বনেতারা তাকে অভিনন্দিত করবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও বিভিন্ন ইস্যুতে তার দেওয়া পরামর্শ গ্রহণের যে ধরণ দেখা গেছে তা থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, গত কয়েকমাস ধরে প্রধানমন্ত্রীকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপনের যে অপচেষ্টা দেখা গেছে সেটা কাজের জায়গায় প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে।’