‘পপি’ মায়ের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না

প্রফেসর ড. মো. রবিউল ইসলাম

পাকিস্তানিরা মুখের ভাষা কেড়ে নিতে বুলেটে ঝাঁঝরা করেছিল কতো বুক, রক্তাক্ত হয়েছিল পিচ ঢালা রাজপথ। সেটা ছিল পৃথিবীর বুকে হাজারো মায়ের বুকে পাহাড়সম আঘাত। সে আঘাতের ক্ষত থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করে আজ আমরা বাঙালিরা অনবরত বাংলায় কথা বলি। একইভাবে একাত্তরে কতো মায়ের কোল থেকে সন্তান কেড়ে নিয়ে বুলেটে ক্ষত বিক্ষত করেছে ঘাতকরা। ত্রিশ লক্ষ শহীদের মায়ের বুক আজো ক্রন্দনরত। দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম এখনো ইতিহাসের কালো অধ্যায়। ডিসেম্বর ১৪ এ কতো উজ্জ্বল নক্ষত্র মায়ের বুক থেকে উল্কার মতো খসে পড়েছিল, সেই জেনোসাইডের বিচার আজও আমরা পাইনি। তবু, বাঙালি থেমে ছিল না কখনো।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক তর্জনীর ডাকে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতা। লাল সবুজের পতাকা। বাঙালির পরিপূর্ণ মুক্তির পয়গামের পূর্বেই পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মারা আবারও ‘বাংলাদেশ’ নামক মাকে কাঁদিয়েছিল। ১৯৭৫ এর সেই ভয়াল গর্ত থেকে স্বর্গের দূত হয়ে বাঙালির জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীর মতো বাংলাদেশিদের জন্য সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে আসে শেখ হাসিনার নৌকাও। তাঁকেও ২১ আগস্ট বোমায় উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো পাকিস্তানের দোসররা। সেই বোমার স্প্লিনটারে অভ্যুত্থান ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির। সেই মুক্তির স্বাদ বিগত পনেরো বছর গ্রাম থেকে শহরের সব মানুষ ভোগ করছে। 

স্থায়ী অর্থনৈতিক মুক্তি, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশের কাণ্ডারি শেখ হাসিনার নৌকায় যাত্রী হবার জন্য যখন বাঙলার মানুষেরা ব্যস্ত, তখন সাম্প্রতিক কিছু লোমহর্ষক ঘটনা আবারও সুস্থ চিত্তকে নাড়া দিচ্ছে। যেমন পুলিশ পিটিয়ে হত্যা। যাত্রীসহ চলন্ত ও দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন। ট্রেনের লাইন কেটে যাত্রীসহ ট্রেন লাইনচ্যুত করা। মৃত্যুর মধ্যে যেন কী এক স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করছে একদল কাপুরুষ। সর্বশেষ এমনই ঘটনা মঙ্গলবার তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন।

ভয়াবহ ওই ঘটনার পর পত্রিকার শিরোনাম দেখছি, আর শিউরে উঠিছি। নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। প্রথম আলোর শিরোনাম ‘কী অপরাধে সব শেষ হলো জানি না, কারও কাছে বিচার চাইব না’; দৈনিক সমকালে ‘শিশু সন্তানকে বুকে জড়িয়েই পুড়ে মারা যান পপি’ এবং ঢাকা পোস্টের শিরনাম, ‘মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সন্তানকে বুকে জড়িয়েই পুড়ে মারা যান পপি’। মনে মনে খুব ভাবছি এই আমার দেশ? যারা কাজটি করলো তারাও তো কোন না কোন ভাবে আমার দেশের মানুষ? যে ভোটার তালিকায় আমার নাম সেই তালিকায়তো তাদেরও নাম। নিজেকে ক্ষমা করি কীভাবে?

এভাবেই, কিছু বিপদগামী গোষ্ঠী, ধর্ম ব্যবসায়ী ও পাকিস্তানি প্রেতাত্মা এদেশকে জিম্মি করতে চায় বছরের পর বছর। হাজারো ‘পপি’ মায়ের বুক খালি করেই তারা নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। কিন্তু, তারা জানে না এ জাতির মায়েরা বেগম রোকেয়ার মতো অটল, অবিচল। মায়েদের আঁচল যতই কান্নায় ভিজে যাক না কেন, তাঁরা দেশের প্রশ্নে, জনগণের কল্যাণের প্রশ্নে, সর্বদা আপোষহীন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকায় তাঁরা জীবনের সমস্ত মূলধন তুলে দিতেও কখনও কার্পণ্য করবে না। কারণ, তাঁরা জানেন এদেশ, এদেশের মাটি ও মানুষ কেবলই জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছেই নিরাপদ। আমাদের মায়েরা জানেন মায়েদের আত্মত্যাগ বাঙালি সমাজে তথা নৌকায় সর্বদা সমুজ্জ্বল ।

হে জাতি, তোমার চোখ খোলো। দেখো, আজ কোন মানুষ উপোষ থাকে না। উত্তরে আর মঙ্গার ঢেউ আসে না। কৃষককে সার বা বীজের জন্য প্রাণ দিতে হয় না। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী আসতে ৫-৭ দিন লাগে না। খামারিদের গরুর লেজ ধরে রাতে ঘুমাতে হয় না। বিদ্যুতের জন্য মারামারি করতে হয় না। টাকা জমানোর জন্য ব্যাংকে ধরনা দিতে হয় না। একেবারে বয়স্ক মানুষটিও ফোনে কথা বলে খবর নেন নাতিপুতির। সব ডিজিটাল সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায়। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা বেড়েছে। উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারই ধারাবাহিকতায় এরইমধ্যে পারমাণবিক চুল্লি পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মত উন্নয়নমূলক কাজ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কাজেই, আসুন সকল অগ্নি সন্ত্রাস, জ্বালাও পোড়াও বয়কট করি এবং বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের ধারায় শামিল হতে নৌকায় সহযাত্রী হই।

লেখক: অধ্যাপক, ফসল শারীরতত্ত্ব ও পরিবেশ বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • Related Posts

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    প্রভাষ আমিন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটা দারুণ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কেন আন্দোলন, দাবি কার কাছে- এসব ঠিক পরিষ্কার নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে এক প্রজ্ঞাপন…

    Continue reading
    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    নিজস্ব প্রতিবেদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রবিবার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি