শনিবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৩ | ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. ই-পেপার
  7. কৃষি
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. জাতীয়
  11. জীবনযাপন
  12. ধর্ম
  13. প্রযুক্তি
  14. বাংলাদেশ
  15. বিনোদন

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে পশ্চিমা বিশ্বের নজরদারিঃ আধিপত্যবাদের শেষ কোথায়!

প্রতিবেদক
বার্তা প্রতিবেদক
নভেম্বর ২৫, ২০২৩ ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

আসিফ ইকবাল আরিফ

বেজে উঠেছে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢাক। দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে বসবাসরত বাংলাদেশিরা এই উৎসবে যোগ দিতে প্রস্তুত। এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের পক্ষে রয়েছে সাধারণ মানুষ। তাদের নেতৃত্ব দিতে সব কাজ প্রায় শেষ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। কিন্তু এই উৎসবে বাধ সাধার সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে পশ্চিমা আধিপত্যবাদ। বাংলাদেশকে তাক করে তারা স্যাংশনসহ নানা আধিপত্যবাদী অস্ত্র শানিয়ে রাখছে।   

পশ্চিমা বিশ্বের এই আধিপত্যবাদী নজর সব সময়ই অ-পশ্চিমা বিশ্বের উপর থাকে। এই পশ্চিমা বিশ্ব তাদের আরোপিত উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবনমান ইত্যাদি চাপিয়ে দিয়ে যে আধিপত্য চর্চা করে বেড়ায় তা আরও বেশি স্পষ্ট হয় অ-পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশের নির্বাচনের সময়। আর তাদের এই কর্তৃত্ববাদী আচরণ প্রকাশ পায় লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হওয়া দেশের গণমাধ্যমগুলোতে। কখনো এই নজরদারির গুণগান/ জয়গান/ মন ভোলানো গান, কখনো বুঝে আবার কখনো না বুঝেই চড়া বাজার দরে স্বজাতভূমির গণমাধ্যম সেই সংবাদ প্রচারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে আধিপত্যের রাজনীতিকে আরও উষ্কে দেয়! 

সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকারের ডাকা নির্বাচনের আহ্বানে বিদেশি নজরদারিতে ক্ষুদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশের এই নাক গলানোকে বেশ বাড়াবাড়ি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। শুধু তাই নয়, এমন নজরদারি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিরও পরিপন্থী। যে দেশে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন, স্বাধীন ও জনবান্ধব প্রশাসনিক কাঠামো রয়েছে, সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি শক্তির নজরদারিতে স্বজাতভূমি বাংলাদেশে প্রতিবাদের মিছিল নেমেছে। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সব থেকে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০০জন শিক্ষক, এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০জন শিক্ষক এই হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি জমা দিয়েছে যা দেশীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই নজরদারি?  পশ্চিমা বিশ্ব সব সময়ই অ-পশ্চিমা বিশ্বকে নজরদারিতে রেখেছে ঐতিহাসিকভাবে। শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, তথ্য ও প্রযুক্তির প্রসারণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দর্শন ও সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার লাগাম হাতে নিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব আর অ-পশ্চিমা বিশ্বকে বানিয়েছে তাদের খরিদ্দার। মূলত জ্ঞান উৎপাদন ও গণমাধ্যমের আধিপত্যই পশ্চিমা সমাজকে উপস্থাপন করেছে নির্ভেজাল হিসেবে আর অ-পশ্চিমা সমাজ তাদের উপাদানকে গোগ্রাসে গিলতে বাধ্য হয়েছে নানাবিধ মুখোশে। 

শুধু তাই নয়, পশ্চিমা বিশ্ব, অ-পশ্চিমা বিশ্বকে সংকট ও অসভ্যের ক্ষেত্র হিসেবেই উপস্থাপন করতে এবং সম্মতি উৎপাদন করতে ব্যস্ত আছে। এতে তাদের আধিপত্যের বাজার আরও প্রসারিত হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের এই নজরদারি ওই আধিপত্যেরই প্রকাশ! 

মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে যে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো, সেই মুক্তির স্বাদ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সাধারণ জনগণ গ্রহণ করতে শুরু করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসারিত হয়েছে, শিক্ষার হার ও মান বেড়েছে, কমেছে ক্ষুধা ও দারিদ্র, নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বাল্যবিবাহ ও শিশু মৃত্যুও। শুধু তাই নয়, সহনশীল আচরণেও বাংলাদেশ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো থেকে এগিয়ে রয়েছে। এদের জীবন জুড়ে থাকে মমতাবোধ, প্রেম আর সাম্য। 

এমন ঈর্ষান্বিত পরিস্থিতিতে অতীতের সংকটময় বাংলাদেশের সাথে বর্তমান পরিবর্তনশীল এই বাংলাদেশের চেহারা বড্ড অপরিচিত পশ্চিমা বিশ্বের কাছে। তাদের গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ বিশ্লেষণ করলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, তারা বোধহয় তাদের মতাদর্শ বাজারজাত করার  খুব নিকট এক বাজার হারাতে বসেছে। আর তাইতো তাদের এতো নজরদারি। তাদের এই নজরদারি শুধু রাজনৈতিক নয়  বরং তা রাজনীতি-অর্থনীতি ও সংস্কৃতির বাজার হারানোর শঙ্কাও! মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও ক্ষুধা মুক্ত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ প্রাণের সঞ্চার ফিরে পেয়েছে। সেই প্রাণ সঞ্চারিত মনোবল ভেঙে দিতে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে এই পশ্চিমা নজরদারি। 

বাংলাদেশের মানুষের যে মানসিক গড়ন ও জীবনবোধের প্রগাঢ়তা - তা কখনোই স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবকে ক্ষমতা কাঠামোতে টিকে থাকতে দেয়নি। এই ভূখণ্ডে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পতন হয়েছে, পতন হয়েছে পাকিস্থানি শাসনের অনাচারেরও। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও পতন হয়েছে দেশীয় স্বৈরাচারী শাসনেরও। বিগত ৩টি নির্বাচন বাংলাদেশের বিদ্যামান সংবিধানের আলোকেই হয়েছে এবং জনগন সেখানে অংশগ্রহণ করেছে। আসন্ন নির্বাচনও সংবিধান মেনেই হবে। সাধারণ জনগণ যে রায় দেবে, সেই রায় মেনেই দেশ শাসন হবে। এখানে পশ্চিমা নজরদারি আমাদের জন্যে হুমকি, আমাদের জন্মের ইতিহাসের সাথেও সাংঘর্ষিক। 

বাংলাদেশের যে মাটির মানুষ; আউল, বাউল, কবি, কৃষক, মুটে, মজুরসহ সাধারণ প্রাণ - তারা দেশীয় গণতন্ত্রকে ভক্তি দিয়ে পূজো করে এবং স্বদেশী কাঠামো নিয়েই সরকার গঠন করতে বদ্ধ পরিকর। ইউরোপ কিংবা আমেরিকার গণতন্ত্রের মডেলে নয়। পুরো ইউরোপ ও আমেরিকা আজ পুড়ছে তাদেরই উৎপাদিত গণতন্ত্র মডেলের ব্যর্থ জ্বরে। মুখ থুবড়ে পড়েছে তাদের শাসন কাঠামোও। এমতাবস্থায় সেই গণতন্ত্রের আদলে বাংলাদেশের নির্বাচনে নাক গলানো কতোটা নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলো? 

স্বজাত ভূমির স্বজাত শাসন গর্জে উঠুক আবার!

বিদেশি প্রভুর নজরদারি গাড়বো খাড়ায় এবার!

মুক্ত স্বাধীন মুক্ত পথে আসবে বিপত্তি যাদের!

মুক্তির গানে লড়বো সবাই এক প্রাণ হয়ে প্রাণের!

লেখকঃ আসিফ ইকবাল আরিফ, সহকারী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। 

সর্বশেষ - রংপুর বিভাগ