বিএনপির ডাকা হরতালকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চোরাগুপ্তা হামলা ঠেকাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সড়ক বাতি জ্বালিয়ে রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ন্যূনতম চারজনের সমন্বয়ে গঠিত সশস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের রাত্রিকালীন নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। ঢাকার সন্দেহভাজন বাসা বাড়ি, মেস ও হোটেলে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
এদিকে হরতাল চলাকালে রোববার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নয়াপল্টনে বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ‘ক্রাইম সিন’ উল্লেখ করে কর্ডন টেপ দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে সিআইডি। এর দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ। এর ফলে নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের ভিতরে প্রবেশ করতে পারবেন না। এদিকে বিএনপি'র কার্যালয়ের সামনেসহ নয়াপল্টনের বিভিন্ন অলি-গলিতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, রোববারের হরতালে নাশকতার বিষয়ে জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশসহ সব ইউনিটকে। একই সঙ্গে সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করতে বলা হয়েছে। শনিবার মহাসমাবেশে পুলিশ হত্যা, পুলিশ আহত, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন বাসা বাড়ি, মেস, হোটেলে রেড দিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে। রাস্তায় চেকপোস্ট আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি বসানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ব্যবস্থা। কমপক্ষে চারজন পুলিশকে অস্ত্রসহ টহল দিতে বলা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে পুলিশকে শক্তিশালী ভূমিকা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আগাম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন বার ও আবাসিক হোটেলগুলোর রেজিস্টার চেক করতে বলা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে বিশেষ চেকপোস্ট। পুলিশ ও র্যাবের তরফ থেকে বাড়ানো হয়েছে রোবাস্ট পেট্রোল ডিউটি। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় থাকা সড়ক বাতি জ্বালিয়ে রাখতে ইতোমধ্যেই দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অনুরোধ করা হয়েছে। যাতে কোনোভাবে অন্ধকারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চোরাগুপ্তা হামলা হতে না পারে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাও। পুলিশের সব সদস্যকে স্ট্যান্ডবাই থাকতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘শনিবারের মহাসমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনার পর আমরা আরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। সাইবার মনিটরিং থেকে শুরু করে নানামুখী তৎপরতা অব্যাহত আছে। রোববারের হরতালকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যাতে কোনো ধরনের গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে এজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে। ঢাকায় বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এককথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শনিবারের ঘটনার পর হরতালকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। একইসঙ্গে পুলিশ সদস্যকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।’
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে দুষ্কৃতকারী ও স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে জিরো টলারেন্স দেখানো হবে। রোববারের হরতালে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে র্যাব। ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল বাড়ানো হয়েছে। যারা মহাসমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা ও নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে র্যাব কাজ করছে। র্যাবের গোয়েন্দারা গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে জড়িত দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে।’
প্রসঙ্গত, শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত, শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যার মধ্যে ৪২ জন পুলিশ সদস্য চিকিৎসাধীন। অন্তত ১৮ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। প্রধান বিচারপতির বাসভবন, প্রায় অর্ধশত গাড়ি, কাকরাইল চার্চে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।