বিএনপির ও সমমনাদের সমাবেশে নাকাল রাজধানীবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিন দিন রাজধানী সভাসমাবেশের কারণে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী। গত এক সপ্তাহে ছাত্র কনভেনশন, অনশন, যুব সমাবেশের কারণে রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলো প্রায় অচল হয়ে যায়। বুধবার মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলার মোড়ে ব্যাপক যানজট দেখা গেছে। এছাড়া শাহবাগ, মালিবাগ, পান্থপথ, গ্রিনরোড এলাকায় যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। এদিকে কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর সমাবেশস্থলের আশপাশে গণপরিবহন না পেয়ে দীর্ঘ সময় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

শেখ হাসিনা তার সরকারর পদত্যাগ নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর দাবিতে গত কযেক মাস ধরে লাগাতার সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। একই দাবিতে তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপির জোট শরিক অন্য দলগুলোও। এরই অংশ হিসেবে গত সোমবার রাজধানীতে যুব সমাবেশ করেছে বিএনপি ও তাদের শরিক সরকার বিরোধী সমমনা দলগুলো। এই ধারাবাহিকতায় বুধবার রাজধানীতে সমাবেশ করে করে দলটি।

এই সমাবেশকে ঘিরে সকাল থেকে রাজধানী ঢাকা যেন ভোগান্তির শহরে পরিণত হয়। দুপুরের পর থেকে নগরীতে গণপরিবহণ বিশেষ করে বাস-মিনিবাসের মত যানবাহনগুলোর উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে। সেব যানবাহনকে রাস্তায় দেখা গেছে সেগুলোতেও যাত্রীরা গাদাগাদি করে উঠেছেন।

দুপুর ২টার দিকে মহাখালী থেকে সাত রাস্তা ধরে মগবাজারের দিকে যেতেই দেখা যায় গাড়ি যেন নড়ছে না। সাত রাস্তায় ফ্লাইওভারের মুখ থেকেই জ্যাম লেগে আছে। নিচে মগবাজার রেল ক্রসিং থেকে কাকরাইল দিকে এবং মৎস্যভবন হয়ে প্রেসক্লাবের দিকে গিয়েছে যে সড়ক গেছে সেগুলোতে যানবাহন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে ছিল। একই অবস্থা সাত রাস্তা মোড় থেকে ফ্লাইওভার মৌচাক-শান্তিগরের দিকে যাওয়াও সড়কটিতেও। ফার্মগেট থেকে কারওয়ানবাজার হয়ে বাংলামটর, শাহবাগ হয়ে মৎস্যভবনের দিকে যাওয়া এবং হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের মোড় থেকে মিন্টু রোড হয়ে প্রেস ক্লাবের দিকে যাওয়া সড়ক দুটিতেও গাড়ির চাকা থেমে আছে। একই চিত্র মিরপুর সড়ক থেকে সায়েন্স ল্যাব হয়ে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত।

এসব সড়কে গাড়ির চাকা ঘুরছে কচ্ছপের চেয়েও কম গতিতে। আবার প্রেস ক্লাব, শাহবাগ, মিন্টো রোড, কাকরাইল, মগবাজার হয়ে যেসব সড়ক মহাখালী ও উত্তরার দিকে গিয়েছে সেগুলো তুলনামূলক ফাঁকা। যানবাহন নেই বললেই চলে।

বিএনপি ও তাদের জোট সঙ্গী সমমনা দলগুলোর সমাবেশের কারণে রাজধানীর রাস্তায় তুলনামূলক যানবাহনের উপস্থিতি কম থাকার পরও যানজটে ভোগান্তি ছিলো চোখে পড়ার মতো। দুপুরের পর থেকেই গুলিস্তান, মতিঝিল,পল্টন, কাকরাইল, প্রেস ক্লাব থেকে উত্তরা ও মহাখালী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর অভিমুখে যাওয়া যাত্রীরা পড়েছেন সবেচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে। কোন যানবাহন পাচ্ছিলেন না তারা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে অনেকেই শেষ পর্যন্ত নিজের দুই পায়ের ওপর ভরসা করে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটে গেছেন।

অফিসার্ ক্লাব সংলগ্ন বেইলি রোডেরমেুখে এক দম্পতি দু্ই সন্তানকে নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে থাকা মাইনুদ্দীন জানান, যাবেন উত্তরা। কিন্তু কোনো গাড়িই পাচ্ছেন না। শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টার পর একটি সিএনজি পেয়েছেন। অনেক দরদাম করে শেষ পর্যন্ত ৭০০ টাকায় ওই সিএনজিতে উঠেছেন উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে যাওয়ার জন্য।

বিকাল সোয়া তিনটার মগবাজার মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অন্তত দুই শত লোক। যাদের একটা বড় অংশ নারী। তাদেরই একজন রুমানা জানালেন, যাবো বনানীতে কিন্তু এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছেন না।

ক্ষোভের সঙ্গে এই নারী বলেন, ‘ভাইরে প্রতিদিন জনসভা করতে হবে কেন? মানুষের তো কাম কাজ থাকে। জরুরি প্রয়োজনে বের হলেও গাড়ি পাওয়া যায় না।’ চাকরিজীবী এই নারী আরও বলেন, এই সমাবেশের কারণে গাড়ি না পাওয়ায় উবাড়, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে চেপে চলাচল করতে হচ্ছে। এজন্য দুই তিন গুণ অতিরিক্ত টাকা গুণতে হচ্ছে।’

লালবাগের বাসিন্ধা জসিম উদ্দিন। কাজ করেন একটি বেসরকারি কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে। বিকাল ৩টার দিকে শাহবাগ মোড়ে যানজটে আটকে ছিলেন। তিনি বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার উপর রাজনৈতিক সমাবেশ চলছে। আমাদেরকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে সড়কের যানজট ঠেলে চলতে হচ্ছে।

বিল্লাল হোসেন ভিক্টর পরিবহনে বাড্ডা থেকে যাচ্ছিলেন গুলিস্তান। তিনি বলেন, ‘তিন ঘণ্টা ধরে গাড়িতেই বসে আছি। গাড়ি যেন সামনের দিকে আগাচ্ছেই না।’

নগরীর তীব্র যানজটে বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নয়াপল্টন, পল্টন, প্রেসক্লাব, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটসহ অনেক জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি চলার কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। কারণ সমাবেশের কারণে প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি সব জায়গায় জ্যাম লেগে গেছে। সমাবশের কারণে যানবাহ চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে।’

  • Related Posts

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    প্রভাষ আমিন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটা দারুণ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কেন আন্দোলন, দাবি কার কাছে- এসব ঠিক পরিষ্কার নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে এক প্রজ্ঞাপন…

    Continue reading
    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    নিজস্ব প্রতিবেদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রবিবার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি