এতো টাকা কোথায় পাচ্ছেন নূর: নতুন অফিসের মূল্য ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সমালোচনার মুখে গত আগস্ট মাসে ৩ কোটি টাকা মূল্যমানের রূপায়ন টাওয়ারের অফিস কেনা ভেস্তে গেলেও আবারও নতুন জায়গায় অফিস স্পেস কেনার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। ইতোমধ্যে বায়নার ৩০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকী টাকা আগামী দুই মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এতো টাকা নূর কোথায় পান? নূরের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে। যদিও নূর বলছেন পুরোটাই পার্টির সদস্যদের টাকা।

নুরুল হক নুর ও রেজা কিবরিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বে দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার পর দুই অংশই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে অস্থায়ী কার্যালয়ে। অন্যদিকে পুলিশের দখলে রয়েছে দলটির প্রীতম জামান টাওয়ারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। অব্যাহতি-পাল্টা অব্যাহতির পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্রীতম জামান টাওয়ারের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয় নুরুল হক নুরের অনুসারীদের।

এর আগে গত আগস্ট মাসে একটি অফিস কেনার কথা জানা গিয়েছিলো। প্রাপ্ত নথিপত্র অনুযায়ী, পল্টনের কালভার্ট রোডের এন/এ নম্বর প্লটে নির্মাণাধীন রূপায়ণ এফপিএবি টাওয়ারের ষষ্ঠ তলায় অবস্থিত ফ্লোরটি বিক্রি করছিলো রূপায়ণ গ্রুপ। আর এটির ক্রেতা মো. নুরুল হক নুর। প্রতি বর্গফুটের মূল্য ধরা হয়েছে ১৯ হাজার ৮০০ টাকা। সেই হিসাবে ১৬৫৫ বর্গফুটের জায়গাটির (স্পেস) মোট মূল্য ৩ কোটি ২৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এর সঙ্গে কার পার্কিং বাবদ ৮ লাখ এবং ইউটিলিটি বাবদ আড়াই লাখ টাকা ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে জায়গাটি কেনার জন্য নুরুল হক নুরকে দিতে হতো ৩ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা। যদিও গণমাধ্যমে সমালোচনার মুখে সেই দফা স্পেস কেনা থেকে বিরত হন নূর।

আবারও নতুন করে অফিস কেনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরুল হক নূর বলেন, ‘এটা পার্টির লোকজনের টাকা। সবাই ন্যূনতম ১০হাজার টাকা করে দিবে। কেউ সামর্থ অনুযায়ী ৫/১০ লক্ষ টাকাও দিচ্ছে। আমি গ্রাম থেকে আসা মানুষ। আমার এতো টাকা কোথা থেকে আসবে। আমাকে নিয়ে যা বলা হয়ে থাকে তার সবই মনগড়া। যদিও টাকার উৎসের প্রসঙ্গ আসলে নুর সবসময় বলে আসেন প্রবাসিদের চাঁদার টাকাই তার উৎস।’

যখন তিনি এরকম দাবি তুলছেন ঠিক তখন নুরের দলের নেতাকর্মীরাই তার বিরুদ্ধে আর্থিক অসংগতির কথা তুলে ধরেছেন, দলের টাকা তিনি ব্যক্তিগতভাবে খরচ করেন, এমনকি প্রবাসীদের দেয়া টাকার হিসাবও তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের কাছে দেন না।

গণ অধিকার পরিষদে নূরের সঙ্গে সহযাত্রী ছিলেন দলটির সাবেক আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া। দলটি ভেঙ্গে যাওয়ার পরপরই নূরের সকল আর্থিক অসঙ্গগতির তথ্য ফাঁস করে দেন । গত ২১ জুন ড. রেজা কিবরিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ নুর প্রবাসে কমিটি গঠনের ব্যাপারে নিজেকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে অনুমোদন দিয়েছেন,যাতে অন্য কেউ প্রবাসীদের টাকার তথ্য না পায়। দলীয় ফান্ডের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। কাউকে হিসাবনিকাশ দিতে চান না তিনি। আমি দলের প্রধান, কিন্তু আমাকে হিসাবনিকাশ দেন না। এখন আমি হিসাব চাওয়াতে তিনি আজেবাজে কথা বলছেন।

পদের বিনিময়ে নূর নগদ অর্থ,দামী গাড়ি নেন পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে,এমন তথ্যও দিয়েছেন রেজা কিবরিয়া । নুরুর বিরুদ্ধে কমিটিতে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে রেজা কিবরিয়া বলেন,  ‘নুর এত গাড়ি কোথায় পায়! এর আগে বলা হয়েছিল কাতারের সভাপতি গাড়ি দিয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। কাতারের সভাপতি কেন গাড়ি দেবে?

অর্থের বিনিময়ে পদ বাণিজ্য করেন বলে নূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন প্রবাসী অধিকার পরিষদের নেতারা। অর্থের বিনিময়ে নুর কমিটি দিয়েছেন, প্রবাসী অধিকার পরিষদ ইরাক শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ সুলতান নুরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন। গত ৫ জুলাই ইউটিউবে নিজের চ্যানেলে সুলতান জানান এ তথ্য ফাঁস করে দেন । তিনি বলেন, ‘প্রবাসি অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক নিয়মের বাইরে প্রায় দুই কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে এবং সেই টাকার মাধ্যমে নুর ও তার গুটিকয়েক সমর্থক লাভবান হয়েছে। কমিটিতে বড় পদায়ন অর্থের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে, যেমন মালয়শিয়া থেকে ভিপি নুরের জন্য যিনি দামী মোবাইল ও মেয়ের জন্য স্বর্ণের চেইন দিয়েছিলেন পরে তাকেই প্রবাসী অধিকার পরিষদের মালয়শিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

গণ অধিকার পরিষদ এর যুগ্ম আহবায়ক মেজর আমীন আহমেদ আফসারী (অব.) একাত্তর টিভিতে এক নতুন তথ্য দিয়েছেন। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার ভাষ্য ,নুরকে এক জায়গা থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, নুর প্রতিমন্ত্রী হবে এবং দশটি আসনও পাবে। আমিন আহমেদ আফসারি একাত্তরকে বলেন, ‘নুর আমাকে অফার করেছে প্রার্থী হবার এবং আমরা ১০টি সিট পাচ্ছি। আমি প্রার্থী হলে নির্বাচনের জন্য দুই কোটি টাকা আমাকে দেয়া হবে এবং নুর পাবে এক কোটি। এভাবে ১০টি আসনের জন্য মোট ৩০ কোটি টাকা পাবে নুর, কিন্তু আমি এই অফার নাকচ করে দিয়েছি।

টাকার উৎস বিষয়ে জানতে চাইলে নূরুল হক নূর বলেন, আমাকে নিয়ে সবসময় সমালোচনা করা হয়। আমরা যখন রাজনৈতিক দল করলাম তখন রেজা কিবরিয়াকে অভিভাবক হিসেবে সাথে রাখলাম। এরপর তিনি বিএনএম এর সাথে যোগাযোগ রাখা শুরু করলেন তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিই আলাদা হওয়ার। আমাদেরকে পুলিশ দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপরতো আমাদের অফিস নিতে হবে। নতুন অফিসের টাকা আসছে কোথা থেকে প্রশ্নে তিনি বলেন, টাকা আমাদের দলের সদস্যদের। আপনাদের দলে কতজন সদস্য যে ২ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা তারা দিচ্ছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, গণ পরিষদের ৫৬টি জেলায় কমিটি আছে, ৩০০ উপজেলা কমিটি আছে। আমাদের ৫টি অঙ্গ সংগঠন আছে, প্রবাসী অধিকার পরিষদ আছে ৪২টা দেশে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৬৩ সদস্য আছে। প্রত্যেকে ন্যুনতম ১০ হাজার টাকা দিবে। অনেকে আছেন যারা ৫/১০ লক্ষ টাকা দিবেন। বাইরের কোন টাকা নেই। তবে তিনি মোট সদস্য কত সেবিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলেননি।

  • Related Posts

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    প্রভাষ আমিন চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে একটা দারুণ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কার বিরুদ্ধে আন্দোলন, কেন আন্দোলন, দাবি কার কাছে- এসব ঠিক পরিষ্কার নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে এক প্রজ্ঞাপন…

    Continue reading
    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    নিজস্ব প্রতিবেদক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে রবিবার (১৪ জুলাই) চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি