জননেত্রী শেখ হাসিনা: প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অপ্রতিদ্বন্দী এক সফল নেতার প্রতিচ্ছবি

প্রফেসর ড. এম. মোতাহার হোসেন

হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পর আর কোন বাঙ্গালী বা এই উপমহাদেশের আর কোন রাজনীতিবিদ রাজনীতির মহানায়ক হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো এতটা সফল, এতটা তেজোদীপ্ত, এতটা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পেরেছে বলে আমি মনে করিনা। রাজনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে একটানা অপরাজিত হাফসেঞ্চুরীর দোড়গোড়ায় দাড়িয়ে, আজও একইভাবে অপ্রতিরোধ্য গণমানূষের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা যাঁর ধারে কাছে যাওয়ার মতো ক্ষমতা বা যোগ্যতা আর কারো হবে কিনা, একদিন ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেবে। এ উপমহাদেশই কেবল নয়, বিশ্বের আর কোন গণতান্ত্রিক দেশে প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতি হিসেবে টানা অর্ধশতক এবং রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হিসেবে দুইদশকের সফল নেতৃত্ব বিশ্বের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা! 

বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক তিনি। তাঁর হাত ধরে এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং উন্নয়ন পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার মহীসোপানে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী রাজনীতিবিদও এগুলো স্পর্শ করতে পারেননি! তাই এ অর্জন অত্যন্ত অনন্য ও অতুলনীয়। তাঁর হাত ধরে বাংলাদেশ আজ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ কাটিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। উন্নয়ন ও গৌরবের এই মাহেন্দ্রক্ষণে তাঁর ৭৭তম জন্মজয়ন্তীর এই শুভদিনে, কোন অভীধাই তাঁকে সম্পূর্ণভাবে মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট নয়। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার সূযোগ্যকণ্যা ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণকারী শেখ হাসিনা তার সমগ্র জীবন বাংলাদেশের সেবায় উৎসর্গ করেছেন। তার গল্পটি কেবল ব্যক্তিগত অর্জনের ফিরিস্তি নয়, বরং প্রখর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তুখোড় এক রাষ্টনায়কের সূনির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক শক্তিশালী নেতৃত্ব কীভাবে একটি জাতিকে রূপান্তর করতে পারে তার একটি সাফল্যময় গৌরবগাঁথা। আমরা যখন তার জন্মদিন উদযাপন করছি, তখন এই অসাধারণ নেতার বর্ণাঢ্য জীবন এবং কৃতিত্বের গভীরে নিমঘ্ন হওয়ার এটি একটি উপযুক্ত মুহূর্ত।

জননেত্রী হয়ে উঠার প্রেক্ষাপট

বাংলদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শহীদ হন। এরপর, দীর্ঘ প্রায় ছয় বছর বিদেশে নির্বাসিত থাকতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। নির্বাসনকালে, পরিবার প্রিয়জন হারানোর অপার বেদনা ধারন করেও ১৯৭৭ সালে ইউরোপে বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য, নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন ‘আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন’। সেই কমিশনের সদস্যদের বাংলাদেশে প্রবেশাধিকার দেয়নি তদানীন্তন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ড ও জেলে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর তৎকালীন বিভিষিকাময় পরিস্থিতিতে, স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের তীব্র সংকট তৈরী হয়। মহিউদ্দিন আহমেদ, বেগম জোহরা তাজউদ্দীন, আবদুল মালেক উকিল, আবদুর রাজ্জাক, ড. কামাল হোসেন, আবদুল মান্নান, বেগম সাজেদা চৌধুরী, জিল্লুর রহমান, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দের কেউ-ই ব্যক্তিগত বা সম্মিলিতভাবে নেতৃত্বের সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারেননি, ফলে তাঁরাই উদ্যোগ নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে রাজনীতির কেন্দ্রে থাকলেও, কোনো রাজনৈতিক সংগঠন পরিচালনার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না। দলের কোন কোন প্রবীণ নেতারা ভেবেছেন, শেখ হাসিনাকে সামনে রেখে তিনি বা তাঁরা-ই দলটি পরিচালনা করবেন। সভাপতি হলেও তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে আসবেন কিনা এই সন্দেহও অনেকের ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা সকল আশঙ্কা এবং অনিশ্চয়তার ঝুঁকি সত্ত্বেও সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে এক বৃষ্টিমুখর দিনে ঢাকায় ফিরে আসেন। দেশে ফিরে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে নানা সংকটের মধ্যেও আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে গুরুদায়িত্ব দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় সামরিক শাসকদের অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ড সামগ্রিকভাবে দেশ ও আওয়ামী লীগের সামনে বিশাল সংকট বয়ে আনে। এরপর পর্দার আড়ালে প্রধান ‘নট’ হিসেবে আবির্ভূত হন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সিএমএইচ-এর রোগশয্যা থেকে উঠিয়ে এনে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংবিধানমতে, কিছুদিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেরও ব্যবস্থা করা হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল কী হতে পারে, শেখ হাসিনা তা আগেই অনুমান করেছিলেন। তবু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ছিল সম্ভাব্য সামরিক শাসনের  তুলনায় কিছুটা হলেও গণতন্ত্র চর্চায় সহায়ক। বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেওয়ার কৌশলে না গিয়ে তিনি ড. কামাল হোসেনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দান করেন। নির্বাচনে যথারীতি জেনারেল এরশাদের গোপন অভিলাষ অনুযায়ী বিচারপতি সাত্তারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিএনপি জয়লাভ করলেও দেশের বৃহত্তম দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। শেখ হাসিনা দলের সম্মিলিত ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে, সকলের সহযোগিতায় দলকে পুনর্গঠনের জন্য বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্বেও দলের অভ্যন্তরে কোন্দল দানা বাঁধতে থাকে। শেখ হাসিনা নমনীয় নীতি এবং সবাইকে নিয়ে চলার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করতে চাইলেও, কিছু সংখ্যক উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতার সংকীর্ণতার জন্য তা সে-মুহূর্তে হয়ে ওঠেনি। এসময় সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক ও প্রবীণ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ দল থেকে বেরিয়ে ‘কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ অর্থাৎ ‘বাকশাল’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দলের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঙন ছিল তাঁর জন্য প্রচণ্ড আঘাত স্বরূপ। বাকশাল নিয়ে আওয়ামী লীগে এক ধরনের ভাবাবেগ ছিল যাকে কাজে লাগিয়ে আবদুর রাজ্জাক দলের প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনে ভাঙন সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ অনুসারী তরুণদের একটি বড় অংশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। বলা যেতে পারে, একটি অগ্নিপরীক্ষায় পড়েন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার ফলে সৃষ্ট জাতীয় সংকট সামাল দেয়ার যে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন, সে-সংকটমোচনের জন্য দল ও দেশবাসীকে প্রস্তুত করার আগেই তাকে নিজ দলের ভেতরই নতুন নতুন সংকট মোকাবিলা করতে হয়। এজন্য তাঁকে অবশেষে মাষ্টার অব ক্রাইসিস ম্যানেজম্যান্ট রূপে অবতীর্ন হতে হয়। তাছাড়া, তাঁর সামনে সবসময় রেফারেন্স হিসেবে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক জীবনদর্শন। পিতার অভিজ্ঞতা ও চারিত্রিক দৃঢ়তাকে পুঁজি করে শেখ হাসিনা উল্কার বেগে বাংলাদেশ চষে বেড়ান। তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ, নেতাকর্মীর প্রকৃত মনোভাব উপলব্ধি করার ঐকান্তিক প্রয়াস এবং সামরিক স্বৈরতন্ত্রের নাগপাশ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে একই সঙ্গে তাঁর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে দেয়। আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে তিনি ১৫-দলীয় জোট গঠন করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে গিয়ে তিনি জেল-জুলুমের শিকার হন। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫-দলীয় জোটের (কার্যত ১০-দল) অনিবার্য জয়কে ছিনিয়ে নেয় জেনারেল এরশাদ। মিডিয়া ক্যুর মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল এরশাদ পাল্টে দেয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিপিবি ও ন্যাপ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও বাসদ প্রভৃতি বামদলগুলো ১৫-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায়। নানা ষড়যন্ত্র ও টানাপোড়েন সত্ত্বেও ক্রমেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। গোটা প্রায় আশির দশক এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দেশ উন্মাতাল ছিল। প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এ সময়ে নিজেকে ‘জাতীয় নেতা তথা জননেত্রী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সংসদে তাঁর বলিষ্ট ভূমিকায় এরশাদ প্রমাদ গোনেন এবং ১৯৮৭ সালেই সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য হন এবং ১৯৮৮ সালে তার স্বৈরাচারী মুখে গণতন্ত্রের মুখোশ পড়াতে গিয়ে ভোটারবিহীন নির্বাচনে মাধ্যমে রাবার স্ট্যাম্প সংসদ গঠন করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার কুশলী ভূমিকা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে এরশাদবিরোধী ‘তিন জোট’-এর যুগপৎ আন্দোলন গড়ে ওঠে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হয়। এরপর, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে সিভিল-মিলিটারি ব্যুরোক্রেসির কারসাজির মাধ্যমে বিএনপিকে জয়ী করা হয়। সংসদে শেখ হাসিনার পক্ষে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। নির্বাচনের আগে ‘তিন জোটের’ অঙ্গীকার (তথা বিএনপিরও) সত্ত্বেও বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে বিল আনা নিয়ে গড়িমসি করছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার অনমনীয় ভূমিকা এবং তীব্র জনমতের চাপে বিএনপিকে সরকারিভাবে বিল আনতে হয়। ফলে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১-এ সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হচ্ছে আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার বিশাল রাজনৈতিক বিজয়।

বিএনপি কোনকালেই গণতন্ত্রমনষ্ক ছিলনা তাই তাদের হাতে দেশের গণতন্ত্রের দিকে অভিযাত্রা কিছুদিনের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে। মিরপুর ও মাগুরা-টাইপের উপনির্বাচনে কারচুপির পটভূমিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের জোড়ালো দাবি তোলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলনের মুখে বিএনপি গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দল ও ভোটারবিহীন নির্বাচনে একটি ঠুঁটো জগন্নাথ সংসদ গঠিত হলেও, সেই সংসদ কার্যকর হতে পারেনি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘জনতার মঞ্চ’ ঘিরে এমন আন্দোলন গড়ে ওঠে যে, সরকার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং খালেদার সরকার তত্ত্বাবধায়ক বিল পাস করেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ’৭৫-এর পর দীর্ঘ ২১ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ড. কামাল হোসেনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। শেখ হাসিনার সরকারই বাংলাদেশে প্রথম যাঁর নের্তৃত্বে নির্বাচিত সংসদ তাঁর মেয়াদ পূর্ণ করে।

এরপর, ২০০১ সালে জাতীয় জীবনে আবারো সংকট নেমে আসে। বিচারপতি লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়। দেশ কার্যত পাকিস্তানি ধারায় শাসিত হতে থাকে। হাজার হাজার আওয়ামী লীগ কর্মী, লক্ষ লক্ষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের শিকার হয়। বরাবরের মতো সেবারও জননেত্রী শেখ হাসিনা অসীম সাহস ও ধৈর্য নিয়ে এই সংকট মোকাবিলায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে চীরতরে স্তব্ধ করতে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের শান্তি সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার মতে নজীরবিহীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালায়। হামলায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। ২০০৭-০৮ সালে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে দেশান্তরিত করার চক্রান্ত করে। ব্যর্থ হলে তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে দীর্ঘদিন কারাবন্দি করে রাখা হয়।

রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখহাসিনার জয়যাত্রা

শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা, অসীম সাহস এবং সংকটমোচনে তাঁর অভূতপূর্ব রাজনৈতিক কলাকৌশল গ্রহনের ফলে, তখনকার রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের মানুষ উপলব্ধি করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই কেবল দেশকে এসংকট থেকে পুনরুদ্ধার করতে পারেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশের অধিক আসনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে বাংলাদেশের মানুষ সেটিই প্রমাণ করেছে।

২০০৯ সাল থেকে টানা প্রায় তিন মেয়াদ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে এবং ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পর পর তিন মেয়াদে দেশের হাল ধরেছেন শেখ হাসিনা। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর এই ১৯ বছরের সাফল্যগাঁথা আজ সারা পৃথিবীর কাছে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এ-কথা এখন বিশ্ববাসী জানে, শেখ হাসিনা প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে বাংলাদেশকে পুনরুদ্ধার করেছেন। দেশকে খাদ্যে আত্মনির্ভরশীল করা, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, আশ্রয়ণ, বিধবা ভাতা, দারিদ্র্য বিমোচনে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রভৃতি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের বিশেষ সাফল্য হিসেবে স্বীকৃত। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়কালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০৬ সালের ৫০৪ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২,৮২৪ ডলার। দারিদ্র্য হার ১৮ শতাংশের নিচে এবং অতি দারিদ্র্য ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন, প্রাথমিক ও নারী শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়া, মেট্রোরেল চালু, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, মহাকাশে নিজস্ব যোগাযোগ স্যাটেলাইট প্রেরণ, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অগ্রগতি, পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় ইতোপূর্বে সম্ভব না হলেও, ২০০৯-১০ সালে জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনীর বিল উত্থাপিত হয়। সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ মূলত ’৭২-এর সংবিধানের ধারায় চলে আসে। অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক ধারা তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় বাংলাদেশ ফিরে আসে। মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর পর শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেন। এটা বিশেষ একটা বিরল দৃষ্টান্ত। জীবনের ঝুঁকি, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন রক্ষণশীল দেশসমূহের চাপ এবং উগ্রপন্থী জঙ্গীদের সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের আসামিসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়।

বিশ্বনেতৃবৃন্দের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন বিশ্বনেতারা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়ন আজ যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছে বলে বিশ্বনেতারা মন্তব্য করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বাধীন করে দেশ গঠনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই পথ অনুসরণ করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বলে বিশ্বনেতারা উল্লেখ করেন। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, চীন, কানাডা, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। বিশ্বনেতারা তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও সুদূরপ্রসারি চিন্তা-চেতনার ফলেই বাংলাদেশে সব দিক থেকে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং উন্নত সমৃদ্ধ দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বলে তারা মন্তব্য করেন। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের পেছনে তারা শেখ হাসিনার ভূমিকাকে বড় করে দেখছেন। নেতাদের বক্তব্যে শেখ হাসিনার সরকারের এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সফলতার প্রশংসা উঠে আসে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে শেখ হাসিনা আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলেও বিশ্বনেতারা মন্তব্য করেন। বৈশ্বিক সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপেরও তারা প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার প্রশংসা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, আমি আনন্দিত যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করছিলেন, যারা এখানকার মানুষকে নিচু চোখে দেখতেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাদের ভুল প্রমাণ করছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের অর্থনেতিক উন্নয়ন ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রগতির একটি উদাহরণ। দেশটি আশা ও সুযোগ-সুবিধার একটি চমৎকার স্থান। ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের মানবাধিকারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। জলবায়ু সংকট নিরসনে কাজ করতে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি প্রশংসনীয়। যুক্তরাজ্যের তৎকালীন  প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। আমরা বাংলাদেশের সমৃদ্ধির স্বপ্নের সঙ্গে থাকতে চাই। সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য সফরকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছেন, ‘আপনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।’ তিনি এ-ও বলেছেন, ‘আমি আপনাকে অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছি। আপনি একজন সফল অর্থনৈতিক নেতা।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন, তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী তার (শেখ হাসিনা) বড় ভক্ত। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তার মেয়েরা শেখ হাসিনার মতো মহান নেতা হবেন এই কামনা করেছেন এবং এ-ও বলেছেন, ‘আপনি আমার দুই মেয়ের জন্য মহান অনুপ্রেরণা।’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সমৃদ্ধির জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, ভূমিহীন ও গৃহহীন বাংলাদেশের জনগণকে সরকারি খরচে বাড়ি দেয়া, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তার গৌরবময় ভূমিকার প্রশংসা করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভিডিও বার্তায় বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারুণ কিছু সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পুনর্গঠন ও উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হয়েছে এবং দ্রুত বর্ধনশীল বিশ্বের কাতারে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে। ৬ শতাংশের অধিক জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) মাধ্যমে বাংলাদেশ তার দেশের মানুষের জীবনকে উন্নত করছে এবং বিশ্ব থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। চীন বাংলাদেশের এমন উন্নয়নে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।

শেখ হাসিনার উচ্চকিত প্রশংসা করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নেতা হিসেবে পেয়ে এই দেশের মানুষ সত্যিই ভাগ্যবান। আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতেন। তিনি এবং তার দল যে দক্ষতার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছে। এই করোনার মাঝেও দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ জিডিপি বাংলাদেশের। এগুলো জেনে আমাদের সত্যিই আনন্দ অনুভূত হয়।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির মতো বিষয়গুলো এ দেশের মানুষের সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করেই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে, বাংলাদেশকে সুখী ও দারিদ্র্যমুক্ত করতে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, বাংলাদেশ অগ্রগতি ও ক্রমাগত উন্নয়নের দিকে স্থিরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মর্যাদা অর্জন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার বাংলাদেশ।

উন্নয়ন অভিমুখে বিস্ময়কর সফলতাসহ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। এসময় সাম্প্রদায়িক নীতি ও প্রবল ভারত বিরোধিতার কারণে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ধর্মীয় উপনিবেশ পাকিস্তান পঙ্গুত্বের দিকে ধাবমান। এসব দেখে কোনো কোনো পাকিস্তানি উন্নয়নশীল বিশ্বের ‘রোল মডেল বাংলাদেশের’ প্রশংসা করছে! পাশাপাশি পাকিস্তানের বিপর্যয়ের জন্য আপসোস করছে!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত পনেরো বছরের ধারাবাহিক শাসনামলে জাপানি বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল দেশ এবং একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্য। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।’

জাপান সফর শেষে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসের বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংকের উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণ নিয়ে ভিত্তিহীন ও কথিত অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের বড় ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। আত্মমর্যাদার প্রশ্নে দৃঢ়চেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঋণপ্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। সৎ, সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করেন পদ্মা সেতু। এ যেন বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সঙ্গে করা অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ।

তাই বাংলাদেশ-বিশ্বব্যাংক অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদ্মা সেতুর ছবি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে উপহার হিসেবে তুলে দেয়ার ছবিটি ভিন্ন মাত্রা পায়। রাতারাতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা যায় বাংলাদেশের মাথা না নোয়ানোর প্রতীক বনে যাওয়া এ ছবিটি। তবে বাংলাদেশকে দেয়া বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তার অঙ্গীকার এ বছর ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এখন বিশ্বব্যাংক মনে করে, পৃথিবীর অনেক দেশই দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে পারে। অতিসম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও করপোরেট সেক্রেটারি মার্সি টেমবন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নকেও অনুকরণীয় বলে অভিবাদন জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের এই দুই শীর্ষ কর্তা। তারা উভয়েই নিজ টুইটবার্তায় বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের গল্প তুলে ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিজের হাস্যোজ্জ্বল একটি ছবি টুইট করেছেন। নিজের টুইটবার্তায় টেমবন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই বিশ্বের অন্যতম সেরা উন্নয়নমূলক দেশ হিসেবে সাফল্যের গল্প তৈরি করেছে। দেশটির অনেক ভালো উদাহরণ রয়েছে, যা ব্যাপকভাবে অনুকরণ করা যেতে পারে।’

বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস তার টুইটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রদর্শনী উদ্বোধনের ছবি টুইট করে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের অংশীদারিত্বের ৫০তম বার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে পেরে আনন্দিত। দারিদ্র্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশের উদ্ভাবনী পদ্ধতি থেকে অনেক দেশ শিক্ষা নিতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকালে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।

তিনি বলেন, ‘সব বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি রোল মডেল। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জন করেছে। হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব কোভিড-১৯-এর পরও বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রেখেছে। ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুসংযোগ স্থাপন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।’

বিশ্ব নেতৃত্ব যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের প্রশংসা করছেন, সে বিষয়ে আরেকটি উদাহরণ না দিলেই নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছরের মাইলফলক পালন উপলক্ষে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লিখেছিলেন, ‘বর্তমানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে বাংলাদেশিদের কর্মশক্তি, উর্বর মস্তিষ্ক ও উদ্ভাবন অবশিষ্ট বিশ্বের কাছে একটি মডেল হিসেবে কাজ করে।’ ওই চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদের অংশীদারিত্ব আগামী ৫০ বছর এবং তার পরও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।’ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া নিয়ে একই চিঠিতে বাইডেন লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে সহমর্মিতা ও মহানুভবতা প্রকাশের উদাহরণ তৈরি করেছেন।’

আমাদের সৌভাগ্য, শেখ হাসিনার মতো একজন যোগ্য নেত্রী পেয়েছি, নেতৃত্ব পেয়েছি। মাত্র ৩৪ বছর বয়সে তিনি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। জনগণকে দেওয়া নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে ৪১ বছর ধরে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এই দীর্ঘ পথচলায় পদে পদে বিপদ এবং মৃত্যুঝুঁকি তাড়া করেছে। ২১ বার তাঁকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। তিনি শুধু আওয়ামী লীগেরই সভানেত্রী হিসেবেই নন, সরকার প্রধান হিসেবেও রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এই মেয়াদ শেষ হলে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বের ২০ বছর পূর্ণ হবে। কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থেকে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী (২৫ বছর) এবং সুবর্ণজয়ন্তী (৫০ বছর) পালন করার রেকর্ডও এখন আওয়ামী লীগ সরকারের ঝুলিতে।

উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। তাঁর হাত ধরে পাহাড়ে শান্তিচুক্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিচুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ সাড়ে ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশকে দিয়ে ভারতের সঙ্গে নতুন সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত। জাতির পিতার কন্যার হাত ধরে ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে এসেছে গুণগত পরিবর্তন।

তাঁর উদ্যোগে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হওয়ার পর ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ বিগত তিন বছরে মোট আয় ৩০০ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। বর্তমানে কোম্পানির মাসিক আয় প্রায় ১০ কোটি টাকা, যার প্রায় পুরোটাই দেশিয় বাজার থেকে অর্জিত হচ্ছে। সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত হতদরিদ্র, অসহায়, বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধীরা মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রভৃতি বড় প্রকল্পের বাস্তবায়নই বলে দিচ্ছে-শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে চলেছে।

তাঁর শাসনামলের প্রতিটি পদে পদে রচিত হচ্ছে সফলতার ইতিহাস। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, উড়াল সেতু, পাতাল রেলের মতো অগণিত বিশ্বমানের স্থাপনা দেশের ইতিহাসে প্রথম সম্ভব হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পথ দেখাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনীতিকে তাঁরা অনুসরণ করছে। মহামারি করোনায় যখন গোটা বিশ্ব টালমাটাল অবস্থা তখন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলা করেছে। সেই সঙ্গে দেশের সকল মানুষের জন্য বিনামূল্যে করোনার টিকা সংগ্রহ এবং তা নিশ্চিত করণে সক্ষমতা অর্জন করেছে আর তার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। এদেশের মানুষকে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। নতুন বিশ্বে বাংলাদেশকে স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি শুধু ঘোষণা দিয়েই থেমে নেই। ইতোমধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ শুরু করেছেন। শেখ হাসিনা যদি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে আজ এ উন্নতি, এ অগ্রগতি হয়তো কোনো ভাবেই সম্ভব হতো না। বর্তমান বিশ্বে একাধারে সৎ, সাহসী, দৃঢ়চেতা, আত্মবিশ্বাসী, পরিশ্রমী ও অনুপ্রেরণাদায়ী নেতার নাম নিতে গেলে চোখ বন্ধ করে যাঁর নামটি প্রথমে আসে তিনি ‘শেখ হাসিনা’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি, বাংলাদেশের তথা বিশ্বে সবচেয়ে সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একনিষ্ঠ দেশপ্রেমের আভিজাত্যে, রাজনৈতিক সৌকর্যে, রাষ্ট্র পরিচালনার মুনশিয়ানায়, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলার দূরদর্শিতায়, মানবিক ঔদার্যে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন বারবার। একজন দূরদর্শী রাজনীতিক শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কোথায় পৌঁছে দিয়েছেন, তা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়। পাকিস্তানের বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতির নানা সূচকে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের কাছে অনুকরণীয়। মাথাপিছু আয়, রফতানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। পাঁচ বছর আগেই মাথাপিছু আয়ে পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। রফতানি আয় পাকিস্তানের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। রিজার্ভ পৌনে ছয় গুণ বেশি। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতিও বাংলাদেশের কয়েক গুণ। পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ হতে চায়। এটিই ক্যারিশম্যাটিক লিডার শেখ হাসিনার অনবদ্য সাফল্য। বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি, যার মাথাপিছু জিডিপি তার আঞ্চলিক প্রতিবেশীর চেয়ে অনেক বেশি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৯ বিলিয়ন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, গড় আয়ু ৪৭ থেকে বেড়ে ৭৩ বছর এবং সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদন, দারিদ্র্য হ্রাস, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগ প্রশমনসহ আর্থসামাজিক খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আর্থসামাজিক এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যে অবস্থানে উন্নীত করতে পেরেছেন, সেটিরই ধারাবাহিকতা অব্যাহত না থাকলে বর্তমান ভূরাজনৈতিকভাবে অতি আকর্ষণীয় দেশটির ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। সে কারণে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিজেদের বাগাড়ম্বরতা পরিহার করে মেধা, মনন, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, দেশপ্রেম এবং আন্তর্জাতিক বাস্তবতার নীরিখে নিজেদের তৈরি করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাই শুধূ ব্যাহত হবে না, ১৮ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে পারে।

লেখক: পরিচালক (আইকিউএসি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

  • Related Posts

    পার্বতীপুরের বেলাইচন্ডীতে শহীদ জিয়া স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চতুর্থ খেলা অনুষ্ঠিত

    দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বেলাইচন্ডী ইয়ং সোসাইটি কর্তৃক আয়োজিত শহীদ জিয়া স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চতুর্থ খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) সাড়ে তিনটায় উপজেলার বেলাইচন্ডী ইউনিয়নের বেলাইচন্ডী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন মুনপুরা…

    Continue reading
    শানের কণ্ঠে ‘শ্যাম কালিয়া’

    বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিভাবান গায়ক শান সায়েক। স্বতন্ত্র এবং প্রাণবন্ত কণ্ঠের এই গায়ক একই সঙ্গে সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও সুপরিচিত। সম্প্রতি নতুন বছর উপলক্ষে আধুনিক লোকসঙ্গীত গানের ভিডিও নিয়ে শ্রোতাদের…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    সকল

    চিরিরবন্দরে বিজ্ঞান মেলা উদ্বোধন

    চিরিরবন্দরে বিজ্ঞান মেলা উদ্বোধন

    সৌদি আরবসহ চার দেশে নিষিদ্ধ অক্ষয়ের সিনেমা

    সৌদি আরবসহ চার দেশে নিষিদ্ধ অক্ষয়ের সিনেমা

    গ্যাস সরবরাহে বাংলাদেশের সঙ্গে বড় চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের

    গ্যাস সরবরাহে বাংলাদেশের সঙ্গে বড় চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের

    ছাত্রদের নতুন দল ফেব্রুয়ারিতেই, টার্গেট বিএনপির ভোট ব্যাংক

    ছাত্রদের নতুন দল ফেব্রুয়ারিতেই, টার্গেট বিএনপির ভোট ব্যাংক

    মেসে ঝুলছিল জবি ছাত্রীর নিথর দেহ

    মেসে ঝুলছিল জবি ছাত্রীর নিথর দেহ

    সাবেক সেনাপ্রধান বীর উত্তম কে এম সফিউল্লাহ মারা গেছেন

    সাবেক সেনাপ্রধান বীর উত্তম কে এম সফিউল্লাহ মারা গেছেন

    চিহ্নিত হলে ৫ কোটি জরিমানা, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

    চিহ্নিত হলে ৫ কোটি জরিমানা, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

    সৈয়দপুরে হাজারীহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের উদ্যোগে শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ

    সৈয়দপুরে হাজারীহাট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের উদ্যোগে শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ

    নীলফামারীতে কোকোর মৃত্যুবার্ষিকীতে শীতার্তরা পেল কম্বল

    নীলফামারীতে কোকোর মৃত্যুবার্ষিকীতে শীতার্তরা পেল কম্বল

    নবায়নযোগ্য জ্বালানির রূপান্তরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে নীলফামারীতে সনাকের মানববন্ধন

    নবায়নযোগ্য জ্বালানির রূপান্তরে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে নীলফামারীতে সনাকের মানববন্ধন