বিশেষ প্রতিনিধি
বাজেট স্বল্পতার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে পারছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে। এরপরই বিরোধী শিবির থেকে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। যদিও আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দাবি, ইইউ চিঠিতে কারণ উল্লেখ করলেও বিরোধীরা মনগড়া বক্তব্য দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনের নিজ দফতরে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তারা বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেটা ফলপ্রসূ হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একটি মেইলের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন, তাদের হেড অফিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাদের পূর্ণাঙ্গ একটি মিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠানোর সঙ্গে আর্থিক বিষয় জড়িত ছিল। বাজেট স্বল্পতার কারণে তা না-মঞ্জুর করা হয়েছে বা আপাতত না পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ইইউ ধন্যবাদ জানিয়ে আরও বলেছেন, সিইসির সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে। তারা ‘পূর্ণাঙ্গ দল’ না পাঠানোর বিষয় বলেছেন। এখানে পূর্ণাঙ্গ দলের কথা বলা হয়েছে।’
এই সিদ্ধান্ত ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, ‘এটা সিইসি ভালো বলতে পারবেন। আর তারা ‘পূর্ণাঙ্গ’কথাটি বলেছেন। কাজেই ছোট দল পাঠাবেন, নাকি এই দেশে যারা আছেন তারাই (পর্যবেক্ষণ) করবেন। কারণ তারা যোগাযোগ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।’
সার্বিক পরিস্থিতিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা ঠিক হবে না উল্লেখ করে, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘বিএনপি নিজেরা অভিনব যুক্তি দাড় করাচ্ছে কেনো তা আমার বোধগম্য না। তাদের উদ্দেশ্য ধোয়াশা সৃষ্টি করা। কারণ তাদের চিন্তা চেতনা সুস্থ না।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি মন্দাতে এমন হতেই পারে। বিশ্বজুড়ে সবাই যার যার জায়গায় বাজেট কমিয়ে চলার চেষ্টা করছে। যদি তারা তাদের আংশিক পর্যবেক্ষক পাঠানোর কারণ চিঠিতে উল্লেখ না করতো তখন বিরোধীরা মনগড়া বক্তব্য দিলে মেনে নেওয়া যেতো। ওরা স্পষ্টভাবে কারণ জানিয়েই দিয়েছে। এখন এসব নিয়ে কথা বলার কারণ নেই।’
২০২০ সালের পর থেকে পুরো বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে নানা জায়গায় বাজেট কমিয়ে কর্মসূচিগুলো চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে। এবার সেটা বাংলোদেশের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেলো। এর আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়েও নানা সঙ্কটের কথা শোনা গিয়েছিলো।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর গত জুলাই মাসে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আরো কী কী করা দরকার সে বিষয়ে তারা অন্যান্য দেশের সাথে আলোচনা করবেন। বিশেষত এই বছরে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাবার বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিষয়টির সমাধান করতে হবে এবং মিয়ানমারেই এর সমাধান করতে হবে। গিলমোর সেসময় বাংলাদেশে পাঁচ দিনের সফরে ছিলেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দাতাদের অর্থায়ন কমায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য খাবার বরাদ্দ প্রথমে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার (প্রতি মাসে জনপ্রতি) এবং পরবর্তী সময়ে ৮ ডলার করা হয়েছে।