বীর নিবাস পেয়ে জীবনমান পাল্টে যাচ্ছে জলঢাকার অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের

১৯৭১ সালে যারা দেশকে ভালোবেসে নিজের জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই বহু বছর ঝুপড়িঘরে অতিকষ্টে দিন কেটেছে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও কেউ কেউ ভেবেছিলেন, হয়তো এভাবেই জীবন কেটে যাবে। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পাল্টে গেছে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্য। সারা দেশের মতো নীলফামারীর জলঢাকাতেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য ১২টি বীর নিবাসের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী তথা মুজিববর্ষ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এসব ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা ভিত্তিক বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছে। ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে এই কমিটিতে রাখা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকেও। সেই সাথে নিয়মিত তদারকি করেছেন জলঢাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ময়নুল হক।
জলঢাকার কৈমারী ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম বলেন,‘ কিছু পাওয়ার আশায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের জন্য বীর নিবার্স নির্মাণ করে দিয়েছে এর থেকে সুখের আর কি হতে পারে।’
একই ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী রঙ্গলাল মোহন্ত বলেন, ‘চুল, দাড়ি সব পেকে সাদা হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম যে কয়েকদিন আর বেচে আছি ঝুপড়ি ঘরে কাটাতে হবে। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিইনি শেষ বয়সে এসে পাকা ঘরে থাকতে পারবো। আমাদের মত অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি করে ঘর বড়ই প্রয়োজন ছিল। সেটিও দিয়ে দিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।’
মীরগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত বীরমুক্তিযোদ্ধা তছলিম উদ্দিনের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম বলেন,‘স্বামী মারা গেছে অনেকদিন। সন্তান নিয়ে ভাঙ্গা ঘরে দিন কাটছিল। কিন্তু ভাবিনি স্বামীর মৃত্যুর পরও ভাঙ্গা ঘর ছেড়ে পাকা ঘরে থাকতে পারবো। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
জলঢাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়,‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ১২টি ‘বীর নিবাস’। একতলা বিশিষ্ট বীর নিবাসের ভবনে ২টি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, ডাইনিং ও ড্রয়িং স্পেস এবং ১টি বাথরুম রয়েছে। এখানে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা।’
জলঢাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ময়নুল হক বলেন,‘ বীর নিবাস নির্মাণ কাজের গুণগতমান নিশ্চিতে আমরা ছিলাম বদ্ধ পরিকর । নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে এসব ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রকল্পের শিডিউল অনুযায়ী মানসম্মত উপকরণ দিয়ে প্রতিটি বীর নিবাস তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণ কাজে সন্তুষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধারাও।’
‘বীর নিবাস’ পেয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নত হবে বলে জানিয়ে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে যাওয়া বীর যোদ্ধাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি করে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ঘর পেয়ে তাদের জীবনমান বদলে যাবে।’

  • Related Posts

    আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

    নীলফামারীর ডিমলায় ডিমলা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার রাতে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২৫ এর ট্রফি উন্মোচন ও উদ্বোধন করেন ডিমলা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও আরাফাত…

    Continue reading
    নীলফামারীতে কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

    কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। নীলফামারী সদর উপজেলা ও সৈয়দপুর উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প দুইটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নানাবিধ সমস্যার কারণে আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময়ে মাটির জিনিসপত্র…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি