নীলফামারীতে ছয় হাজার ৯৭২ মেট্রিক টন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে জেলায় ৮৩২ হেক্টর জমিতে রসুন চাষে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত অর্জিত জমির পরিমান ৭২৪ হেক্টর (চলমান)। তবে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। দাম চড়া হওয়ায় মাঠে মাঠে রসুন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক।
স্থানীয় কৃষক আব্দুর রউফ জানায়, ‘সার, বীজ, সেচ, নিড়ানী, হাল ও কৃষি শ্রমিকসহ খরচ হয় বিঘা প্রতি প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় রসুন উৎপাদন হয় ১৮ থেকে ২০ মন। বর্তমান বাজারে পাইকারী ২২০ টাকা কেজি হিসাবে প্রতিমন রসুন আট হাজার ৮০০ টাকা হিসাবে মূল্য দাঁড়ায় এক লক্ষ্য ৭৬ হাজার টাকা। আর খরচ বাদে এক বিঘা জমিতে লাভ হবে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার টাকা। বাজারে দাম ভাল পেয়ে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের রসুন চাষে। এটি মসল্যা জাতীয় ফসল হওয়ায় কদর অনেক বেশী।’’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমতল জমিসহ তিস্তার পতিত চড় এলাকা জুড়ে রসুন চাষের ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। জেলার জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের বুড়ি তিস্তা চর এলাকার কৃষক শাহিন ইসলাম বলেন, ‘আমি এবার তিন বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছি। বাজারে চাহিদা অনেক বেশী এবং দামও অনেক চড়া। আশা করি, আমার তিন বিঘা জমিতে রসুনের উৎপাদন হবে প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ মন। ওই পরিমান রসুন ফলাতে আমার ব্যয় হবে এক লাখ ৫০ টাকা। আর বাজার ভাল থাকলে খরচ বাদে লাভ হবে প্রায় তিন লাখ ৭৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ধান, পাট, গম ও ভূট্টার আবাদ কমিয়ে দিয়ে সবজি ও মসল্লা জাতীয় ফসল রসুন আবাদ করছি। এবার ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার চাহিদা মিটিয়ে পরিবারের অভাব অনাটন মোচন করতে পারবো।’’
উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক হারুন ইসলাম বলেন, ‘গতবারের চেয়ে এবার সার বীজ, মুজুরির দাম একটু বেশি। এক বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি দুই বিঘা জমিতে রসুন চাষ করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে বিঘা প্রতি রসুনের ফলন হবে ১৮ থেকে ২০ মন। আশা করি, খরচ বাদে বিঘায় লাভ হবে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো। রসুন চাষে রোগ বালাইসহ খরচও কম হয়। অল্প খরচে লাভ বেশী, তাই এবার সংসারের চাহিদা মিটিয়ে লাভবান হতে পারবো।’
নীলফামারী সদর উপজেলার গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ভবানীগঞ্জ গ্রামের রসুন চাষি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এবার নিজশ্ব বীজ দিয়ে দেড় বিঘা জমিতে রসুনের চাষ করেছি। আবহাওয়া ভাল থাকায় চাড়া গুলো লক লক করে বেড়ে উঠছে। আগামি মাসে রসুন ঘরে তুলতে পারবো। নিজের বাড়ীর বীজ হওয়ায় বেশী লাভের আশা করছি। সার, সেচ ও পরিচর্চায় সামান্য খরচে হয়েছে। ফলন ও বাজার দু,টাই ভাল হলে পুরো ফসলটাই লাভ হবে বলে মনে করি।’’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ জানান, ‘এই উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে রসুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সদরে ৫ হেক্টর জমিতে রসুনের বেশী চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার বাজারে দাম ও ফলন দু,টাই ভাল হবে। মাঠে পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। রসুন চাষে থেমে নেই এই এলাকার কৃষকরা। আবহাওয়া ভাল হলে রসুনের বাম্পার ফলন হবে আশা করেন তিনি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জেলায় এবার ৮৩০ হেক্টর জমিতে রসুনের চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ছয় হাজার ৯৭২ মেট্রিকটন রসুন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আশা করি, বাজার দর স্থায়ী হলে কৃষক রসুন চাষে লাভবান হবে। এসব রসুন দেশের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করবে। অল্প খরচে বেশী লাভে এই মসল্লা জাতীয় ফসল চাষে আগামিতে কৃষক আরও আগ্রহী হবে।’