নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রথমবারের মতো ট্রে-তে করে কৃষকরা চারা রোপন করছে। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জমিতে চারা লাগানোর জন্য এ প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের পাখাতি পাড়ার কৃষকরা। তা দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে অন্যান্য এলাকার কৃষক ও মানুষজন।
ট্রে-তে চারা রোপন পদ্দতিকে বলা হয় সমলয় পদ্ধতি। এতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি ও চারা রোপণ না করে প্লাস্টিকের ট্রে-তে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে লাগানো হয়েছে ধানের বীজ। এতে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে চারা মাঠে লাগানোর উপযোগী হবে। বর্তমানে এই চারার বয়স চলছে ৭/৮ দিন।
ইউনিয়নের কামারপুকুর ব্লকের প্রায় ১শ’ ৫০ বিঘা জমিতে একই সময়ে মেশিনের মাধ্যমে এ চারা রোপণ করা হবে, সমলয় পদ্ধতিতে বীজ রোপন, বীজতলা থেকে চারা তোলা, জমিতে চারা রোপণ এবং ধান কাটা সব প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সম্পাদন করা হবে। এমনটি জানিয়েছেন সৈয়দপুর কৃষি বিভাগ। এবং তারা সার্বক্ষণিক তদারকিও করছেন।
উপজেলার ওই ইউনিয়নের উল্লেখিত এলাকায় গেলে দেখা যায় নানা ধরনের কর্মযজ্ঞ। এলাকার কৃষকরা পরিচর্যার কাজও করছে পুরোদমে। নিয়মিত সার ও কীটনাশক স্প্রে চলছে। সেভাবে কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক তদারকিতে তৈরি হচ্ছে এলাকার কৃষকরা।
জানা যায়, তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে ঢেকে রাখা হয়েছে বীজতলা। উল্লেখিত জমিতে সবাই মিলে একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করবেন এমটি জানিয়েছেন এলাকার কৃষক।
কামারপুকুর ব্লকের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আশা জানান, প্লাস্টিকের ট্রে-তে বীজতলা করায় ধানের চারা উত্তোলন, রোপণ, ফসল মাড়াই সবই একযোগে করা হবে। এ পদ্ধতিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে সামান্য জৈব সারের ব্যবহারে খরচ কমে হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করায় ১শ’৪০ থেকে ১শ’ ৪৫ দিনের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব হবে।
জানা যায়,সমলয় পদ্ধতিতে কৃষকের সময় অপচয়রোধ, ধান চাষে কৃষকদের শ্রমিক সংকট নিরসন, ও অতিরিক্ত খরচ রোধে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনার আওতায় এবারে প্রথম ‘সমলয়’ চাষ পদ্ধতিতে বীজতলা ও ধানের চারা রোপণে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। ফলে কৃষিতে খুলছে এক নতুন দুয়ার।
ওই এলাকার কৃষক মানিক বলেন, আমার এক বিঘা (৬০ শতাংশ) জমিতে প্রায় চার হাজার ট্রে-তে বীজতলা করা হয়েছে। এজন্য চারার ট্রে-গুলো জমিতে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। মাটি যেন শুকিয়ে না যায়, সেজন্য পানি স্প্রে করা হয়। শীত ও প্রচন্ড কুয়াশায় চারার যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। চারার উচ্চতা ৪ ইঞ্চি হলে বা চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হলে তা জমিতে রোপণ করার উপযোগী হবে। এরপর স্থানীয় কৃষকের ১শ’৫০ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা হবে মেশিনের মাধ্যমে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, এই উপজেলায় এ ধরনের সমলয় পদ্ধতি প্রথম। এতে কৃষকের প্রচুর আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ট্রে-তে চারা উৎপাদনে জমির অপচয়ও কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। ফলে এতে ফলনও বাড়ে। একসঙ্গে রোপণ করায় ধান একসঙ্গে পাকবে ও কৃষকরা একসঙ্গে ধান ঘরেও তুলতে পারবেন।