সুন্দর একটি পরিকল্পনাই পারে আপনার জীবনকে সফল করতে। জীবনের একটি বছর শেষে নতুন বছর শুরু হয়েছে। নতুন বছরের আগত দিনগুলো ঘিরে একজন মুমিনের পরিকল্পনা কেমন হবে, কোন বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা উচিত কিংবা কোন কাজগুলো বর্জন করা আবশ্যক ইত্যাদি পরিকল্পনা করে সাজানোই একজন সফলতাকামী মুমিনের কর্তব্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করে এমনভাবে পরিকল্পনা করবে, যেন তোমরা জানো যে তোমরা একদিন মরে যাবে এবং আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নেবে। (আবু দাউদ) নতুন বছরে আমরা কল্যাণকর যেসব কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে পারি এবং নামাজ রোজাসহ মৌলিক ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য যেসব ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারি, তা উল্লেখ করা হলো।কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন : বুঝে বুঝে নিয়মিত কোরআন-হাদিস অধ্যয়ন করা একজন মুসলমানের গুরুত্বপূর্ণ দিক। এতে আত্মিক উন্নতি, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। নিয়মিত কোরআন-হাদিসের অধ্যয়নের মাধ্যমে আল্লাহর আদেশ পালনে সক্ষম এবং তার নৈকট্য লাভ করা যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে এবং তা বাস্তবায়ন করে, তার জন্য জান্নাতে একটি বিশেষ মর্যাদা থাকবে। (সহিহ মুসলিম) একনিষ্ঠভাবে নামাজ আদায় করা : যথাসময়ে খুশু-খুজু বা একনিষ্ঠভাবে নামাজ আদায় করা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ। সময় মতো নামাজ পড়া আমাদের ইমানের পূর্ণতা এবং মহান রবের আনুগত্যের প্রকাশ। রাসুল (সা.) বলেছেন, নামাজ সময় মতো আদায় করা মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় আমল। (তিরমিজি) আত্মীয়স্বজনদের খোঁজখবর রাখা : আত্মীয়তার সম্পর্ক ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এমন অনেকেই আছে বছরের পর বছর চলে গেলেও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বা খোঁজখবর নেয় না। এমনটি না করা। যদি সম্ভব হয় সপ্তাহে একবার অথবা মাসে একবার আত্মীয়স্বজনের খবর নেওয়া। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, জাদুতে বিশ্বাসী। (মুসনাদে আহমদ) অপরাধ থেকে বিরত থাকা : একজন মুসলমানের জন্য নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিথ্যা কথা বলা, অহংকার করা, গিবত করা ও পরনিন্দা থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রাখা কাম্য। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর জন্য অন্যায় থেকে বিরত থাকে, মহান আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। (সহিহ বুখারি) রোজা রাখা : রমজানের রোজা পালন করা ছাড়াও প্রত্যেক মাসে কয়েকটি করে নফল রোজা রাখা মুমিনের কাজ। মহানবী (সা.)ও প্রতি মাসে নিয়মিত নফল রোজা রাখতেন। এ রোজা আমলের পাল্লায় অনেক ভারী। আর প্রতি মাসে নিয়মিত রোজা রাখলে মানসিক প্রশান্তিও মেলে। সুতরাং আমাদের পরকালের আমলের পাল্লা ভারী করতে আমরা প্রতি মাসে নিয়মিত কয়েকটি করে রোজা রাখতে পারি। যেমন আইয়ামের বিজের রোজা বা সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোজা, যা হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। দান করা : আমাদের মাসিক মোট উপার্জন থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু টাকা প্রত্যেক মাসে দান করব। হয়তো এই সামান্য টাকা কোনো অসহায় মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করবে। কিন্তু তাতে দানকারীর চূড়ান্ত সফলতার পথ প্রশস্ত হবে। দানের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে তার পেট পূর্ণ করার আগে, তার দান করল, সে সফল। (আবু দাউদ) রবের সাহায্য ও সম্পর্ক : সুনির্দিষ্ট কল্যাণমূলক পরিকল্পনা তৈরি করে তা বাস্তবায়নের জন্য মহান রবের কাছে প্রার্থনা করতে হবে। পাশাপাশি নফল নামাজ, রোজা, দান-সদকা করা এবং তাহাজ্জুদের নামাজে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সারা বছর সৎকাজ করার এবং অসৎকাজ থেকে বিরত থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।