নিজস্ব প্রতিবেদক
ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় প্রীতি উরাং নামে একজন শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দেওয়া সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিবৃতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ। ঘটনার দশদিন পর হলেও এই বিবৃতি প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তারা বেশকিছু প্রশ্ন তুলেছেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পত্রিকাটি ভূমিকা রাখবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা এই কথা জানায়। খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার প্রতিষ্ঠান কি শিশু শ্রমিক রাখার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে? হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ এবং জেলখানায় বন্দি আসামিকে সাময়িক বরখাস্ত না করা কি গণমাধ্যমের নৈতিকতা ও মূল্যবোধগত বিষয়? ব্যক্তির অপরাধের দায় কি দ্য ডেইলি স্টার-এর? শিশু প্রীতি ও ফেরদৌসীর সাথে কি ন্যায়বিচার হয়েছে? কেন বারবার একই বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটছে- বিষয়টি কি একটি দায়িত্বশীল গণমাধ্যম হিসেবে আপনি বিবেচনায় নিয়েছেন?
নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ আমরা বিশ্বাস করে দ্য ডেইলি স্টারও একই প্রশ্নের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবেই সেগুলোকে আলোচনায় তুলতে চাইছে না। তারা খোলা চিঠিতে জানিয়েছে, উন্নত জীবন পেতে শিশু প্রীতিদের গৃহকর্মীর কাজে ঢাকায় আসাকে তারা সমর্থন করে না। পাশাপাশি তারা আহবান জানায়, অবিলম্বে পত্রিকাটি আশফাকুল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং প্রীতি উরাং ও ফেরদৌসির বেগমের পরিবারকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে।
ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ‘বাসভবন থেকে পড়ে’ কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনার ১০দিন পরে পত্রিকাটির অবস্থান জানান সম্পাদক মাহফুজ আনাম। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টায় তিনি এক বিবৃতিতে ১৫ বছর বয়সী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি করেছেন ঘটনার সঙ্গে কে জড়িত তা বিবেচনায় না নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার এ মামলার বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ করবে; যেমনটি অন্য সব ক্ষেত্রে করে থাকে।
এরপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ থেকে খোলা চিঠিতে লেখা হয়, প্রদত্ত বিবৃতিটি অভিযুক্তের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি একটি প্রভাবশালী পত্রিকার প্রভাব বিস্তারের দুরভিসন্ধি বটে। দ্বিতীয়বার একই ধরনের ঘটনার অবতারণা হলেও একই অভিযুক্ত আশফাকুল হককে দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদকের পদে বহাল রাখা’- প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নয় কি? একটি নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্তের স্বার্থে আশফাকুল হককে নির্বাহী সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ করে বিবৃতি প্রকাশ করা হলে, সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বশীলতা প্রমাণিত হতো।
সম্পাদকের দেওয়া নোটের সমালোচনা করতে গিয়ে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ তাদের যুক্তি তুলে ধরে। তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আপনি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন, উল্লেখ করেছেন। অথচ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পরপর একই ধরনের দুটি অভিযোগ উঠে এসেছে, যা আপনি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন। অভিযোগটি বিচারাধীন থাকার পরও আপনি তা বিবৃতিতে উল্লেখ করেননি। এমনকি আপনার পত্রিকার পক্ষ থেকে অন্যান্য ঘটনার মতো এই ২টি ঘটনায় সরেজমিন অনুসন্ধান করে বিশ্লেষণধর্মী ও তুলনামূলক আলোচনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি, যা পত্রিকার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ।