নীলফামারীতে গত কয়েক বছর ধরে আমন মৌসুমে কৃষকরা সরকারের দেয়া বাজার মুল্য না পেয়ে বিঘা প্রতি তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান করেছে। এই লোকসান কেটে উঠতে না উঠতেই আবার বোরো ধান রোপন করতে হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহ থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান রোপন শুরু করেছে কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করে মাঠে নেমেছে কৃষি বিভাগ। তবে এখন পর্যন্ত অর্জিত জমির পরিমান দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৩৪ হেক্টর। এছাড়াও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ এক হাজার ৩৯৭ মেট্রিক টন।
জেলার ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিন জোড়াবাড়ী গ্রামের কৃষক রাজু মিয়া (৪৫), জানান গত কয়েক বছর ধরে নানা রকম দূর্যোগে আমন চাষে লোকসান হয়ে আসছে। এ ছাড়া বাজারে ধানের বাজার মূল্য উঠানামার কারনে চরমভাবে লোকসান গুনতে হয় আমন আবাদে। এর পরেও কৃষক চলতি মৌসমে আমনের ক্ষতি পুশিয়ে নিতে লাভের আশায় কোমর বেঁধে বোরোর আবাদ শুরু করেছে।
একই এলাকার কৃষক হামিদার রহমান (৬২) জানান, মৌসমের সময় সরকারের নির্ধারিত দামে কৃষক ধান বিক্রি করতে না পারায় বিঘা প্রতি প্রায় তিন হাজার থেকে চার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হয়েছে। অপরদিকে, মধ্যস্বত্বভোগিরা কৃষকের থেকে দ্ধিগুন লাভবান হয়। এটি দেখার কেউ নেই।
জেলা সদরের লক্ষিচাপ ইউনিয়নের দুর্বাছড়ি গ্রামের কৃষক রুবেল সরকার (৩৫) জানান, পারিবারিকভাবে আমাদের প্রধান পেশা কৃষিই আমাদের জীবিকার পথ। বিশেষ করে ধান আবাদ না করলে উচ্চ মুল্যে চাল কিনে খেতে হয়। এতে কৃষক আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবজি জাতীয় ফসলের মত ধানের দাম পেলে কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে পারতো।
উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ (৪২) জানান, সরকারকে কৃষকের স্বার্থে কৃষির ওপর নজর দেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি। ধান চাষে বারবার লোকসান হওয়ায় কৃষক ধান চাষ থেকে বিমুখ হচ্ছে। বাজারে বেশী বেশী দাম পাওয়ায় কৃষক ঝুঁকে পড়ছেন ভুট্টা, আলু, গম, সরিসা ও সবজি জাতীয় ফসলের দিকে। জেলার মানুষ কৃষি নিভর্রশীল হওয়ায় লোকসান হলেও দু,মুঠো ভাতের আশায় ধান আবাদ করতে বাদ্য হয়। তাই গত মৌসুমের লোকসান মাথায় নিয়েই বোরো ধান রোপন শুরু করা হয়েছে।
জেলা শহরের নিউবাবু পাড়ার কৃষক মহুবার রহমান জানান, এক শতাংশ জমির বোরোর বীজতলা ঘন কুয়াশায় সিংভাগ ঝলসে গেছে। এমতবস্থায় চড়ামুল্যে চারা সংগ্রহ করে চার বিঘা জমির মধ্যে দুই বিঘায় আগামজাতের চারা লাগিয়েছি। বাকী দুই বিঘায় কি করবো জানিনা। চেষ্টা করছি চারা কিনে লাগাতে হবে। আর সেই রোপিত ধানের ন্যায্য বাজার মুল্য না পেলে ফের লোকসানের দারস্থ হতে হবে।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ জানান, এবার সদরে ২৩ হাজার ৭৪৩ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে এযাবত অর্জিত হয়েছে (জমির পরিমান) তিন হাজার ৫০ হেক্টর। প্রকৃতিক দুর্যোগের কারণে বোরো রোপন একটু থমকে গেছে। আশ করি, এই দূর্যোগ কেটে গেলে কৃষি বিভাগের এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি বান্ধব সরকার কৃষকদের প্রণোদনার আওতায় এনে বীজ ও সারে ভূর্তকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে লোকসানের প্রশ্নই আসে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম আবু বক্কর সাইফুল ইসলাম জানান, এবার জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর। আশা করি, এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তিনি বলেন, সরকার ধানের লোকসান কাঠিয়ে উঠতে (সার, বীজ) কৃষি প্রণোদনা ও কৃষক পূর্ণবাসনের কাজ করে যাচ্ছে।