নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে ময়নুল ইসলাম নামের এক যুবক ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে পরিবারে ফিরিয়ে এনেছেন স্বচ্ছলতা। তিনি উপজেলার কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির মাঝাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ওই এলাকায় ঘোড়া দিয়ে হালচাষে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, আগে গ্রামবাংলার কৃষিতে হালচাষে একমাত্র মাধ্যম ছিল গরু ও মহিষ। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আহরণ ও ঘোড়ার গাড়ি ছিল ধনাঢ্য ব্যক্তিদের প্রধান বাহন। কিন্তু প্রযুক্তির যুগে এখন হালচাষ,বাহন চলছে অত্যাধুনিক যান্ত্রীক প্রযুক্তিতে।তাই ঐতিহ্যবাহী গরু,মহিষ দিয়ে হালচাষ, বাহন ও ঘোড়ার পিঠে আহরণ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
কিশোরগঞ্জ ইউপি মাঝাপাড়া গ্রামের ময়নুল বলেন,আমার পরিবারে আগে অভাব লেগেই থাকতো,এখন আমি পরিবার নিয়ে অনেক সুখে আছি,পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এনেছি। বর্তমান বাজারে ১ জোড়া বলদ গরু বা মহিষের দাম ২ থেকে ৩ লাখ টাকা। এ টাকা দিয়ে অন্তত ১০ জোড়া ঘোড়া কেনা যায়। ঘোড়ার লালন-পালন খরচ ও রোগ-বালাই কম। দৈনিক খাবারে ব্যয় হয় ২৫০ টাকা। তাই ঘোড়ার হালচাষের কদর ও চাহিদা অনেক বেশী। আমি দেড় বছর আগে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে ১টা ঘোড়া কিনি। গাড়ি তৈরি করে মালামাল পরিবহন শুরু করি। দৈনন্দিন ভাড়া খাটিয়ে আয় হতো ৮০০-১০০০ টাকা। এ আয় দিয়ে ১ বছর আগে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে হালচাষে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ১জোড়া ঘোড়া নেই।কৃষকরা ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ না করে আমার ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে নিচ্ছেন।অগ্রিম হালের মজুরি দিচ্ছেন। প্রতি হাল ৩০ শতাংশ (১ বিঘা) জমি চাষে দাম নেওয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা করে। ইরি-বোরো আবাদের মৌসুম চলছে। এতে হালের প্রচুর চাহিদা। বর্তমানে দৈনন্দিন আমার আয় ১২০০-১৪০০ টাকা।
চাঁদখানা নগর বন গ্রামের কৃষক আজমল হক বলেন, সময়মতো ট্রাক্টর পাওয়া যায় না। চাষে বেশি খনন হয় না। ঘোড়ার লাঙলের ফলায় জমির গভীর পর্যন্ত চাষ হয়। চাষের পর মই দেওয়ার কোনো চিন্তা থাকে না, তাই ঘোড়া দিয়ে চাষ করে নিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, ঘোড়া দিয়ে হালচাষে মাটির গুণাগুণ ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে। প্রকৃতির লাঙল কেঁচোসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গ ধ্বংস হয় না। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ফসল ভালো হয়। ময়নুলের ঘোড়া দিয়ে হালচাষে স্থানীয়দের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।