মো. ইলিয়াস হোসেন

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে, যেখানে বাংলাদেশরে অবস্থান গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ হ্রাস পেয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু এই সূচক হ্রাস-বৃদ্ধির সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে কতটুকু সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে সেটি বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

১৯৯৫ সাল থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা প্রতি বছর দুর্নীতির ধারণা সূচক  প্রকাশ করে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রথম তালিকাভুক্ত হয়। ঐ সালে বাংলাদেশের দুর্নীতির ধারণা সূচক  (সিপিআই) স্কোর ছিল ০.৪ এবং বিশ্বে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১ নাম্বার জায়গা করে নিয়েছিল।

পরবর্তীতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ১ নাম্বারে অবস্থান করে ২০০৬ সালে কিছুটা উন্নীত হয়ে ৩য় হয়েছিল। এভাবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত অবস্থান ১০-এর উপরে উঠতে পারেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সিপিআই-এ বাংলাদেশের অবস্থান প্রথমবারের মত ১০ এর উপরে ওঠে আসে। এরপর এক দশকে দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নক্রম হিসেবে কখনো ১২তম হয়েছে কখনো ১৩তম বা ১৪তম। এভাবে ঘুরপাক খেয়েছে।

গতবছর ২০২২ সালে আমরা দেখি সেই অবস্থান দাঁড়িয়েছিল ১২তম এবং এবছর ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন সিপিআই অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যে আবর্তিত ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় আরও এক পয়েন্ট কমে এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন ২৪ স্কোর এবং নিম্নক্রম ও ঊর্ধ্বক্রম উভয় দিক থেকেই দুই ধাপ অবনমন হয়ে যথাক্রমে ১০ম ও ১৪৯তম অবস্থানে রয়েছে।

২০২৩ সালের সিপিআই  হিসেব অনুযায়ী শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে পাঁচটি দেশ এবছর ২০২২-এর তুলনায় কম স্কোর করেছে আর অবশিষ্ট দুটি দেশের স্কোর কিছুটা বেড়েছে।

তবে বাংলাদেশের মত এই সিপিআই সূচক বৃহৎ অর্থনীতির দেশ আমেরিকারও উঠানামা করে। ২০২১ সালে যেখানে আমেরিকার অবস্থান ছিল ২৭তম কিন্তু ২০২৩ সালে এসে দেখা যায় ২৪তম হয়ে গেছে।

আমেরিকার জিডিপি ২৩.৩২ ট্রিলিয়ন ইউএসডি, এই বৃহৎ অর্থনীতি সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যেও দুর্নীতি হচ্ছে। তবে সেটা কমিয়ে নিয়ে আসতে পারাটা সরকারের সক্ষমতাকে প্রমাণ করে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে।

২০০১-০২ সালে বাংলাদেশের বাজেট বিয়াল্লিশ হাজার তিনশত ছয় কোটি টাকা ছিল। সেটি ২০০৮-০৯ সালে দাঁড়িয়েছে নিরানব্বই হাজার নয়শত বাষট্টি কোটি টাকা এবং বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটের আকার হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ( দৈনিক ইত্তেফাক, ৩জুন ২০২১)।

যা ২০০১-০২ সালের তুলনায় ১৮গুন বাজেট বড় হয়েছে আবার সিপিআই সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ গুন। বর্তমানে এই অর্থ ব্যয় হচ্ছে ৪৩টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যা ২০০১ সালে ছিল ২৮টি। সুতরাং এই ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি পরিচালনার পরিসরও বেড়ে গিয়েছে।

দৃঢ়ভাবে পরিচালনার অঙ্গিকার করা হলেও ত্রুটি থেকে যাচ্ছে যা কাম্য নয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিল, আবার সরকার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের জন্য মানি লন্ডারিং বিরোধী আইন-২০১৩ প্রণয়ন করেছে কিন্তু আশানুরুপভাবে এগুলো বন্ধ হচ্ছে না।

সরকার প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে যেমন পদ্মা সেতু প্রকল্প, ৩৪ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্প সম্পন্ন করে সাহসী ভূমিকা রেখেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধেও সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে বীরদর্পে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক: প্রভাষক, ইতিহাস বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়