আগাম আলু চাষীরা এবার হরতাল-অবরোধে বিপাকে পড়েছে। লাভের আশায় আগাম আলু চাষ করে বিক্রি করতে গিয়ে তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেনা। শুক্রবার উত্তরের নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় আগাম আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। বেশি দামে বীজ- সার-বীজ কিনে আগাম চাষ করা হয় আলু।
শুক্রবার কিশোরীগঞ্জ উপজেলার উত্তরদুরাকটি গ্রামে আগাম আলু চাষ আবাদ করে ৬৫দিন পর তা উত্তোলন শুরু হয়েছে। গত বছর এ সময় আগাম জাতের নতুন আলু বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। সেই আলু ফসলের মাঠে এবার ৭০ টাকা কেজি।
আগাম আলু চাষী আলম হোসেন বললেন ৭ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছি। শুক্রবার এক বিঘা জমির আলু উত্তোলন করেছি। কিন্তু ব্যবসায়ীরা হরতাল আবরোধের কারনে আলুর বাজার ধরতে যে দামে ক্রয় করছে তাতে উৎপাদন খরচ ফিরে পেতেই হিমসিম খাচ্ছি। আলু চাষী আলম জানান, প্রথমে অসময়ে বৃষ্টির কারনে আগাম আলু চাষ করতে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছি। এখন হরতাল অবরোধ ও ভারত থেকে নতুন আলু আমদানীর নামে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আমাদের স্থানীয় দেশী আলুর দাম কমিয়ে দিয়েছে। তিনি কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন হরতাল অবরোধ আমাদের কৃষকদের পথে বসাবে। গত বছর যে আলু ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি এবার সেই আলু ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম। তার উপর জমি থেকে আলু উত্তোলনে শ্রমিকদের খরচ দিয়ে হয়।
একই এলাকার আগাম আলু চাষি এমদাদুল হক জানালেন তিনি ১২ বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছেন। হরতাল অবরোধ ও ভারত থেকে নতুন আলু আমদানীর কারনে ব্যবসায়ীরা আমাদের দেশীয় আলুর দাম কমিয়ে দিয়ে আমাদের জিম্মি করে ফেলেছে।তিনি জানান, আজ ১৫শতক জমিক আলু তুলে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হলাম। ব্যবসায়ীরা বলেছে আগামী রবিবার থেকে এই আলু তারা ৫০ টাকা কেজি দরেও কিনবেনা। কারন একটাই হরতাল অবরোধ। এবার আগাম আলু চাষ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
আগাম আলু ক্রয়কারী চাঁদপুরের সবজি আড়ৎদার সেলিম হাওলাদার জানান, নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জে আগাম আলু উত্তোলন হয়। সে কারনে চাঁদপুর থেকে এখানে এসে নতুন আগাম আলু ক্রয় করে নিয়ে যাই। এবার রাজনৈতিক মাঠ গরম-হরতাল,অবরোধ সর্বপরি ভারত থেকে নতুন আলু আমদানী হওয়ায় স্থানীয় আলুর দাম কমে গেছে। আজ শুক্রবার ৭০ টাকা কেজি দরে ফসলের মাঠেই ৬৭০ কেজি আলু ক্রয় করেছি ৭০ টাকা কেজি দরে। যা দুপুরেই ট্রাকে ঢাকার কাওরান বাজারে প্রেরণ করেছি। যা শনিবার সকালে ঢাকার বাজার ধরা যাবে। কিন্তু রবিবার থেকে হরতাল অবরোধ পুনরায় চালু হলে এই আলু ৫০ টাকা কেজি দরে ক্রয় করা সম্ভব হবে না। কারন আলু কিনে পাঠাবো কেমনে। কোন ট্রাক যাবে না ঢাকা।
কৃষি বিভাগ জানায় এবার নীলফামারী জেলায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছে। যা এখন উত্তোলন শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার সর্তে¦ জানালেন শীতের আগাম সবজি ও আগাম আলু চাষ হয়েছে প্রচুর। দাম পাচ্ছিল কৃষকরা। তবে হরতাল-অবরোধের কারণে কৃষক তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পারলেও স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীরা কৃষক পর্যায়ে দাম ধস নামিয়ে দিয়ে বাজারে বেশী দামে বিক্রি করছে। ফলে কৃষকরা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন বলে তিনি স্বীকার করেন।