বিশেষ প্রতিবেদক

গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, ভোগড়াসহ শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে সাঁজোয়া যান নিয়ে টহল দিচ্ছে বিজিবি। গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের প্রায় সব কারখানা খুলেছে। পুরোদমে চলছে উৎপাদন। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ সাংবাদিকদের জানান, সকাল থেকে শিল্প পুলিশের টহল দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন।  টঙ্গী, গাজীপুর, শ্রীপুর, মাওনা, ময়মনসিংহ, সাভার, ইপিজেড, নারায়ণগঞ্জ, ডিএমপি, চট্টগ্রামসহ পোশাকশিল্প এলাকা  নিরাপদ রয়েছে। আর পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান জানান, অল্প কিছু কারখানা বন্ধ থাকলেও খুব দ্রুত সেগুলো খোলার প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে সোমবার বিজিএমইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের আহবানে সাড়া দিয়ে কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার শ্রমিকরা কাজে ফিরছেন। শ্রমিকরা কাজ করতে চাইলে,  কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হবে। এসময় বলা হয়,  কারখানাগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে ইতিবাচক জনমত প্রচার করেছে গণমাধ্যমগুলো। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কর্তৃপক্ষও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে এখন পর্যন্ত গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের বড় একটি চক্র রুখে দেয়া গেছে।

মঙ্গলবার সকালে কোনাবাড়ি এলাকার একজন শ্রমিক জানান, সরকার যে বেতন বাড়াতে বলেছে, তা দিয়ে খুব সচ্ছল না হলেও মানিয়ে নেয়া যায়। সর্বনিম্ন বেতন ২০ হাজার টাকা হলে মোটামুটি চলত। ভোগড়া বাইপাসের একটি গার্মেন্টেসে কাজে যাওয়ার পথে কথা বরলেন আঞ্জুয়ারা বেগম। তার মত বেতন আরেকটু বাড়লে ভালো হতো। কিন্তু বেতনের দাবিতে ভাঙচুর নাশকতা তিনি সমর্থন করেননি। গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় কাজ করতে আসা এই শ্রমিক জানান বেশিরভাগ শ্রমিক ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত না।  শ্রমিকরা তাদের কাজের যায়গা নষ্ট করতে চায় না।  কিন্তু কীভাবে কী হয়ে যায় তা বলতেও পারে না তারা। কাজ করতে করতেই তারা শুনতে পান আজ আর কাজ হবে না। তাড়াহুড়ো করে তখন বের হয়ে আসতে হয়।

গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সরকারের মজুরি বোর্ড থেকে বেতন সাড়ে ১২ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু শ্রমিকরা ঘোষিত সেই বেতন প্রত্যাখ্যান করে আবার বিক্ষোভ, কারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

বৃহস্পতিবারের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কোনাবাড়ীর তুসুকা কারখানা। কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের বন্ধের বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়। তুসুকা জিনস লি., তুসুকা ট্রাউজার্স লি., তুসুকা প্রসেসিং লি., তুসুকা প্যাকেজিং লি. ও নিডেল আর্ট এমব্রয়ডারি লিমিটেডের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানানো হয় যে, অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করে। কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এঅবস্থায় কারখানা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং কারখানার সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখে।

রবিবার পর্যন্ত আশুলিয়া, গাজীপুর ও উত্তরায় ১৩৭ পোশাক কারখানায় ‘বন্ধের’ নোটিশ দেওয়া হয়। শুধু গাজীপুরেই ১২৩টি কারখানা ভাঙচুর করা হয়। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২টি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। তুসুকা কারখানার পরিচালক মো. তারেক সাংবাদিকদের জানান,শুধু তার ‘কারখানাতেই ভাঙচুর করে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। এসব কাজে আমাদের শ্রমিকরা জড়িত ছিল না। অনেক বহিরাগত ছিল। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে প্রশাসন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

এর ঠিক একদিন আগে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে যাদের চেহারা চিহ্নিত হচ্ছে এরা সবাই বিএনপির অ্যাক্টিভিস্ট। দেখা গেছে কুষ্টিয়া থেকে একজন শ্রমিকদল নেতা কোনাবাড়ীতে এসে শ্রমিকদের উস্কানী দিচ্ছেন। এরই মধ্যে সংবাদ মাধ্যমের ভিডিও দেখে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে। নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পরও নিরীহ শ্রমিকদের উস্কানি দেয় তারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করতে রপ্তানিতে সবচেয়ে অবদান রাখা এই খাতকে বেছে নেয় বিএনপি এবং তার দোসররা।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় কমায় সরকার একটু হলেও মুদ্রাস্ফীতির চাপে আছে। এই সুযোগে সরকারকে চাপে রাখতে তৈরি পোশাক খাতকে টার্গেট করে এইসব করাচ্ছে বিএনপি। তাদের লক্ষ্য নিরীহ শ্রমিকের মৃত্যু। যাতে এটাকে তারা ইস্যু করে সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে গার্মেন্টস কর্মীদের যুক্ত করা যায়।