বিশেষ প্রতিনিধি

‘পুরা দিনে একশ টেহাও বিক্রি হয় নাই। আমরাতো দিনের টাকা দিনে খাই। আজ আমাগো বাড়ির মানসের মুখে খাবার জুটবো না। সে খবর রাহে কিডা? রাস্তা ফাঁকা। লোকজন কেনে না। এসব ভাইব্যা রাইতে গুম হয় না। কী করে বাঁইচবো?’ কথাগুলো বলছিলেন ডাব বিক্রেতা রহিম মিয়া। তিনি বলেন, এখানে রোজ এতো লোক আসে। হাসপাতালের সামনে বসে থাকি। সেখানেও বিক্রি নাই। বাজারে গেলে অন্তত দু তিনশ টাকা লাগে। এসব কি তাদের জানা নাই?

বিজয় স্মরণি সিগন্যালে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তিন হকার। সেখানে যেতেই তারা তাদের পণ্য কিনবো কিনা জিজ্ঞেস করে। অবরোধে বিক্রি হয় কেমন জানতে চাইলে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলেন, লোক কোথায় যে কিনবে? গত সপ্তাহে তিনদিন গেছে অবরোধ, হরতাল গেছে, পুরা সপ্তাহেই বিক্রি নাই। লোকজনের মন ভালো না থাকলে সিগন্যালের জিনিস তেমন কেউ কিনতে চায় না। আমার স্ত্রী চন্দ্রিমার কোনায় ফুল বিক্রি করে। এই গন্ডগোলের মধ্যে ফুল কিনবে কে? যারা রাজনীতি করে মিছিল মিটিং করে তারা কি আমাদের কথা ভেবে করে? তারা কে ক্ষমতায় থাকবে কে যাবে সেসব নিয়েই ভাবনা। আমাদের খবর কেউ রাখে না।’

ব্র্যাকের গবেষণা বলছে, রাজধানীতে ৩ লক্ষের বেশি হকার কাজ করে। সাধারণত রাস্তায় চলাচল করা মানুষই এদের ক্রেতা। তারা কেউ নির্দিষ্ট জায়গায় বসেন, কেউ ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন। হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচিতে তাদের হয়রানি বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বিক্রি না থাকায় একেবারে রোজকার খাবারের ওপর চাপ পড়ে।

বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফায় ডাকা অবরোধের প্রথম দিন ছিলো রবিবার। গত তিন দিনের অবরোধ ও একদিনের হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ এ নিয়ে শঙ্কায় পথে বাস নেই বললেই চলে। অবরোধের আগের রাত থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এসময়ে অন্তত ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড, শিমরাইল ও কাঁচপুরের তিনটি বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লার বাসগুলোর বেশিরভাগ কাউন্টারগুলো ছিল বন্ধ। কয়েকটি কাউন্টার খোলা দেখা গেলেও পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্মীরা বলছেন যাত্রী সংকটেগাড়ি ছাড়া হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে বাস চালানোর জন্য অভয় দেওয়া হলেও তারা বেশিরভাগই ভয় কাটিয়ে রাস্তায় নামতে পারেনি। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘যাদের গাড়ি এখন পর্যন্ত পুড়েছে তারাতো আমাদেরই কেউ না কেউ। দেখেছিতো কী হয়রানির মধ্যে তাদের পড়তে হয়। গাড়িও পুড়বে আবার পুড়ানোর সঙ্গে কারা যুক্ত ছিলো সেই নিয়ে তাকেই জেরার মুখোমুখি হতে হয়। সেকারণে আয় বন্ধ করে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’

গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে একটা ভ্যানের ওপর বসে চারজন আড্ডা দিচ্ছেন। এক কাউন্টার মাস্টার বলেন, ‘বাস চালাতে বলেছে, আমরাও গাড়ি প্রস্তুত করে বসে আছি। যাত্রী নেই। বাস ইচ্ছে করে চালাচ্ছি না এমন না। বাস না চললে মালিকের ১০ দিনেও কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু আমার তো লস। আমরা যারা দিনের আয় রোজগার দিয়ে সংসার চালায় তাদের পয়সাটা আসবে কোথা থেকে সেটা কেউ একবার ভাবে না।’

এদিকে অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহবুব আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ৫ নভেম্বর দুপুরে রাজধানীর উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি কাজী মো. হাসানকে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে।