হাতের মেহেদির রং শুকাতে না শুকাতেই বিধবা এক নববধূ। বর-কনের কথোপকথনের সময় কাটিয়েছেন মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরই মধ্যে একটি ঘাতক বাস শেষ করে দিল নবদম্পতির সংসার। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন তেল পাম্পের সামনে ঘোড়াঘাট-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে একটি যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত হন নববিবাহিত পুলিশ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম (৩৮) ও তার বন্ধু মোনাইম হোসেন সুজন (৪০)।
ওইরাত ২টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে নিহত দুই বন্ধুর মরদেহ নিজ বাড়িতে এলে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশের পরিবেশ। বিয়ের কয়েক ঘণ্টার মাথায় স্বামীকে হারিয়ে নির্বাক নববধূ ও তার পরিবারের লোকজন।
নিহত জহুরুল ইসলাম ফুলবাড়ী উপজেলার লক্ষ্মীপুর জয়নগর গ্রামের আফার উদ্দিনের ছেলে। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি নীলফামারীর ডিএসবির জলঢাকা জোনে উপ পরিদর্শক (এসআই) পদে কর্মরত ছিলেন। তার বন্ধু মোনাইম খয়েরবাড়ি মির্জাপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি ফুলবাড়িতে একটি ওষুধ কোম্পানির রিপেজেন্টিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিয়ে করতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৭ দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন জহুরুল। সোমবার (২ অক্টোবর) রাতে ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের বানাহার গ্রামের রুমা আক্তারের সাথে তার বিয়ে হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকালে বন্ধু সুজনকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে রাজশাহীর বিশেষ দায়রা জজ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে যান তিনি।
সাক্ষ্য শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। পথে বিরামপুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন তেল পাম্পের সামনে ঘোড়াঘাট-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা নওগাঁগামী ওমর ফারুক পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহি বাস তাদের মোটসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে জহিরুল ও সুজন ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের দুইজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঘাতক বাসটিকে জব্দ করেছে পুলিশ।
জহুরুলের চাচাতো ভাই নওশাত আলম বলেন, ভাই গত পরশুদিন বিয়ে করতে বাড়িতে এসেছিলেন। গায়ে হলুদের দিন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। রাতে বিয়ে করে সকালে তিনি মামলার সাক্ষ্য দিতে রাজশাহী গিয়েছিলেন। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। পরিবারের কারোই কথা বলার মতো অবস্থা নেই।
এদিকে জলঢাকা জোন ডিএসবি কর্মরত কনস্টেবল রবিউল ইসলাম বলেন, স্যার খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ওনার সাথে কাজ করেছি, কোনদিন দেখিনি উনি কারোর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। ওনার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি নিজেই হতদম্ভ মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ যেন ভাইকে জান্নাত নসিব করেন।