দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে উৎপাদিত ইক্ষু খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। পাইকারদের নিকট এর চাহিদাও বেশি। তাই অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভজনক হওয়ায় ইক্ষু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক। দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইক্ষু চাষ। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলায় গেন্ডারি জাতের ইক্ষুর (আখ, কুষার) ফলনও ভালো হয়েছে। বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় ইক্ষুচাষিরাও খুশি।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের উপর এবং ইক্ষুর আশানুরুপ ফলন এবং বাজারে চাহিদা থাকায় দিনদিন কৃষকদের মধ্যে ইক্ষু চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে আরো অধিক হারে পতিত জমিতে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে।
উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে ইক্ষুর বেশ চাহিদা রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত ইক্ষুর স্বাদ বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি। তাই পাইকারদের নিকট এসব ইক্ষুর চাহিদাও বেশি। পাইকাররা চাষিদের নিকট থেকে এসব ইক্ষু ক্রয় ও সংগ্রহ করে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে স্থানীয় মানুষের নিকট বিক্রি করেনন এবং অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ করে থাকেন। বছরের তিন মাস বাজারে এসব ইক্ষু বেচাকেনা করে লাভবান হচ্ছে কৃষকসহ খুচরা-পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতারা। খুচরা বাজারে আকার ও সাইজভেদে প্রতিটি ইক্ষু ২০-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে ইক্ষু উৎপাদনে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। উৎপাদিত ইক্ষু বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ২ লাখ টাকায়।
উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের জগদিশ মেম্বারপাড়ার ইক্ষুচাষি হিরেন্দ্র নাথ রায় (৫৫) জানান, ইক্ষু একটি লাভজনক ফসল। এ বছর আমি ২১ শতক জমিতে ইক্ষু চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি ইক্ষু ১২-১৫ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছি। আমি এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকার ইক্ষু বিক্রি করেছি। আমার এ জমি থেকে আরো অন্তত ৩০-৩৫ হাজার টাকার ইক্ষু বিক্রি করতে পারবো। আমার আগামীদিনে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে ইক্ষু চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।
একই এলাকার ইক্ষুচাষি বাদল চন্দ্র রায় জানান, ইক্ষু চাষে প্রথমে ৩-৪ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু করে ফাল্গুণ-চৈত্র মাস পর্যন্ত ইক্ষুর চারা রোপন করতে হয়। ইক্ষু চাষে তেমন একটা সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। আমি এ বছর দেড় বিঘা জমিতে ইক্ষু চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত ইক্ষু অন্তত ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। আরও ২৫ শতক জমিতে ইক্ষু রয়েছে। স্বল্প শ্রম ও খরচে ইক্ষু চাষে লাভবান হওয়া যায়। শুধু তারাই ইক্ষু চাষ করেছেন তা নয়। তাদের মতো কেশব চন্দ্র রায় ৩৩ শতক, নিমাই চন্দ্র রায় ৪০, কার্তিক সাধু ১০, মনোরঞ্জন চন্দ্র রায় ১২ শতক জমিতে ইক্ষু চাষ করেছেন। তাদের মতো আরও অনেক কৃষক ইক্ষু চাষ করেছেন। তারা আরও জানান, আমাদেরকে ইক্ষু বাজারজাত করা নিয়ে কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। মৌসুমী ইক্ষু ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই তা ক্রয় করে নিয়ে নেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, অনেক কৃষক বেশি লাভের আশায় গেন্ডারি জাতের ইক্ষু চাষ করেছেন। ইক্ষু চাষে তেমন একটা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। অল্প পরিশ্রম ও খরচে ইক্ষু চাষে লাভবান হওয়া যায়। এছাড়াও ইক্ষুর সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলও চাষ করা যায়।