দেশের আট বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। বন্যার কারণে চট্টগ্রাম, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা- এই তিন বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হবে ২৭ আগস্ট। এবার সব মিলে পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থী। যা গত বছরের চেয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন বেশি।

শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বলছে, পরীক্ষা নেওয়ার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। প্রথম বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় হবে ৩০ মিনিট। আর সৃজনশীল পরীক্ষার ক্ষেত্রে সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। ব্যবহারিকসহ বিষয়ের পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় হবে ২৫ মিনিট। আর সৃজনশীল বা রচনামূলক অংশের সময় হবে ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। তবে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট। এ পরীক্ষার নম্বর কমেছে। পরীক্ষা বিরতিহীনভাবে চলবে। বহুনির্বাচনী বা রচনামূলক অংশের মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না।

বোর্ডগুলো আরও জানিয়েছে, সকাল দশটায় অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাড়ে নয়টায় উত্তরপত্র ও ওএমআর শিট বিতরণ করা হবে। দশটায় বহুনির্বাচনী প্রশ্ন দেওয়া হবে। সাড়ে দশটায় ওএমআর শিট সংগ্রহ করে সৃজনশীল প্রশ্ন বিতরণ করা হবে। আর দুপুর দুইটার পরীক্ষার ক্ষেত্রে দেড়টায় উত্তরপত্র ও ওএমআর শিট বিতরণ করা হবে। দুইটায় দেওয়া হবে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন। আর আড়াইটায় ওএমআর শিট সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র দেওয়া হবে। কলেজগুলোর মাধ্যমে প্রবেশ পত্র ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে উত্তরপত্রে তার রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি ওএমআর ফরমে লিখে বৃত্ত ভরাট করবে।

কোনো অবস্থাতেই মার্জিনের মধ্যে লেখা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না। পরীক্ষার্থীদের ত্বত্তীয়, বহুনির্বাচনী ও ব্যবহারিক অংশে পৃথকভাবে পাস করতে হবে। প্রত্যেক পরীক্ষার্থী কেবল রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশ পত্রের উল্লিখিত বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। অন্য বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারবেন না। পরীক্ষার্থীরা সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেট ব্যবহার করতে পারবেন। প্রোগ্রামেবল বা প্রোগ্রামিং ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে না। পরীক্ষা কেন্দ্রে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। কোনো পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে মুঠোফোন নিয়ে আসতে পারবেন না।

এবার এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১ লাখ ৮ হাজার ৫৯৪ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি, ৯৮ হাজার ৩১ জন শিক্ষার্থী আলিম ও ১ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষার্থী এইচএসসি বিএম, বিএমটি ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন। ২ হাজার ৬৫৮টি কেন্দ্রে মোট ৯ হাজার ১৬৯ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন। গত বছরের তুলনায় এবার ৯টি কেন্দ্র বেড়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কমেছে ১২টি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন। এদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৩ লাখ ৯ হাজার ২৮৩ জন, রাজশাহী বোর্ডের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৬০ জন, কুমিল্লা বোর্ডের ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫৫ জন, যশোর বোর্ডের ১ লাখ ১০ হাজার ৩৫৩ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডের ৬৭ হাজার ২৮৯ জন, সিলেট বোর্ডের ৮৩ হাজার ২২৪ জন, দিনাজপুরে বোর্ডের ১ লাখ ১০ হাজার ৬৬১ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৭৬ হাজার ৬৬১ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

আর আলিম পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৮ হাজার ৩১ জনের মধ্যে ৫৩ হাজার ৬৩ জন ছাত্র ও ৪৪ হাজার ৯৬৮ জন ছাত্রী। ২ হাজার ৬৮টি মাদ্রাসার এসব শিক্ষার্থী মোট ৪৪৯টি কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষায় অংশ নেবেন। আর এইচএসসি বিএম, বিএমটি, ভোকেশনাল পরীক্ষায় অংশ নেবেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১৭ জন পরীক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৯ হাজার ৫৭৩ জন ও ছাত্রী ৪৩ হাজার ৯৬৮ জন। তারা ১ হাজার ৮৩৪টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৭৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

বিদেশে জেদ্দা, রিয়াদ, ত্রিপলি, দোহা, আবুধাবি, দুবাই, বাহরাইন, সাহাম, ওমান মোট ৮টি কেন্দ্রে ৩২৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে ব্যবহারিকসহ বিষয়গুলোতে পরীক্ষার্থীদের প্রতি পত্রে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর মধ্যে রচনামূলকে ৫০ নম্বর ও নৈর্ব্যত্তিকে থাকবে ২৫ নম্বর। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ব্যবহারিক ছাড়া বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রতি পত্রে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর মধ্যে ৭০ নম্বর রচনামূলক পরীক্ষা ও ৩০ নম্বরের নৈর্ব্যত্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, রসায়ন প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র, উচ্চতর গণিত প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের মতো বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবহারিকসহ প্রতি পত্রের পরীক্ষা হবে মোট ৭৫ নম্বরে। এর মধ্যে রচনামূলকে ৫০ ও নৈর্ব্যক্তিকে থাকবে ২৫ নম্বর। রচনামূলক অংশে প্রতিটি পত্রে মোট ৮টি প্রশ্ন থাকবে। এর মধ্যে ৫টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রতিটিতে ১০ নম্বর। আর নৈর্ব্যত্তিকে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে, এর মধ্যে উত্তর করতে হবে ২৫টিরই। প্রতিটির মান ১ নম্বর।

আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ও ব্যবহারিক ছাড়া বিষয়গুলোতে প্রতি পত্রে মোট পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে। এর মধ্যে রচনামূলকে থাকবে ৭০ নম্বর আর নৈর্ব্যত্তিকে থাকছে ৩০ নম্বর। রচনামূলক অংশে ১১টি প্রশ্ন থাকলেও উত্তর করতে হবে ৭টি প্রশ্নের। প্রতিটিতে ১০ নম্বর। আর নৈর্ব্যত্তিকে ৩০টি প্রশ্নের মধ্যে উত্তর করতে হবে ৩০টিরই। প্রতিটির মান ১ নম্বর।

বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। এর মধ্যে রচনামূলকে থাকবে ৭০ নম্বর ও নৈর্ব্যত্তিকে থাকবে ৩০ নম্বর। রচনামূলকে ১১টি প্রশ্নের মধ্যে ৭টি ও নৈর্ব্যত্তিকে ৩০ প্রশ্নের ৩০টিরই উত্তর দিতে হবে। আর বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের রচনামূলক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে। তবে এ তিনটি পত্রের এনসিটিবির প্রণয়ন করা মানবণ্টনে পরীক্ষা হবে।

তবে আইসিটি বিষয়ে আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষা হবে মোট ৭৫ নম্বরের। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হবে ৫০ নম্বরের। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ২৫ নম্বরের। লিখিত অংশে রচনামূলকে ৩০ নম্বর ও এমসিকিউতে ২৫ নম্বর থাকবে। রচনামূলকে মোট ৮টি প্রশ্ন থাকবে আর ভেতর থেকে ৩টি উত্তর দিতে হবে। আর এমসিকিউ অংশে থাকবে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে তার ভেতর ২০টির উত্তর দিতে হবে। রচনামূলক পরীক্ষা হবে ২ ঘণ্টা ও বহুনির্বাচনী অংশে পরীক্ষা হবে ২৫ মিনিট।

ঢাকা বোর্ডের সংশোধিত কেন্দ্র তালিকা প্রকাশ

এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা ২০২৩-এর সংশোধিত কেন্দ্র তালিকা প্রকাশ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড। বুধবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর আবুল বাশার স্বাক্ষরিত সংশোধিত কেন্দ্র তালিকা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

এতে কেন্দ্র তালিকা, কেন্দ্রের কোড নম্বর, কেন্দ্রের আওতাধীন কলেজের নাম, কলেজের কোড নম্বর, কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা ইত্যাদির বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

কেন্দ্র তালিকার বিষয়ে বোর্ডের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের কাছ থেকে কেন্দ্র ফি-এর টাকা গ্রহণ করে গোপনীয় কাগজপত্র জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে, অলিখিত উত্তরপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষা পরিচালনা করবেন। প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ডাকযোগে ওএমআর-এর প্রথম অংশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কম্পিউটার কেন্দ্রে এবং উত্তরপত্রসমূহ পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা মোতাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর পাঠাবেন। ভেন্যু কেন্দ্রসমূহ মূল কেন্দ্র থেকে টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গ্রহণ করে পরীক্ষা পরিচালনা করবেন এবং পরীক্ষা শেষে এতদসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র মূল কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দেবেন। জেলা সদরে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরীক্ষা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচিত কলেজের অধ্যক্ষ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হবেন অধ্যক্ষ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বা কলেজের সিনিয়র কোনো অধ্যাপক।