প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর না পেয়ে মানববন্ধন করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অর্ধ শতাধিক প্রকৃত ভূমিহীন, দুস্থ অসহায় মানুষ। বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে তারা প্রথমে সৈয়দপুর প্রেসক্লাবের সামনে এবং পরে উপজেলা পরিষদে ইউএনও’র অফিসের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
এসময় তারা দাবী করেন যে, বার বার আবেদন করা সত্বেও তাদেরকে বাড়ি বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বরং প্রতিবারই তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ অনেক স্বচ্ছল পরিবারের লোকজনকে আশ্রয়ণের বাড়ি দেয়া হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ইউপি মেম্মার ও চেয়ারম্যান এভাবে অনিয়ম করে বাড়ি পাওয়ার যোগ্য প্রকৃত গরীব মানুষদের বাদ দিয়ে বিল্ডিং বাড়ির মালিক, বিঘা বিঘা জমির মালিকদের নাম তালিকাভুক্ত করেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও’র কাছে অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি।
মানববন্ধনে উপস্থিত বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের নাড্ডা মামুদের ছেলে আলাউদ্দিন (৫৬) বলেন, আমি একজন ভুমিহীন মানুষ। বার বার আবেদন করেও আমি কোন ঘর পাইনি। চেয়ারম্যান মেম্বাররা টাকা চায় টাকা না দেয়ায় তারা আমার নাম লিষ্ট থেকে বাদ দিয়ে অন্যদের দিয়েছে। দেখার কেউ নাই। আমরা কি অপরাধ করেছি যে, আমাদেরকে এভাবে বঞ্জিত করা হচ্ছে?
একইভাবে অভিযোগ করেন মৃত আমিনুলের স্ত্রী রাবেয়া (৪৫)। তিনি বলেন, মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে খাই। অন্যের বাড়িতেই একটু জায়গায় থাকি। তারপরও আমার আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছেনা। আমি আবেদন করলেও কোন ঘর পাচ্ছিনা। টাকা দিতে পারিনাই বলেই হয়তো দেয়া হয়না। কিন্তু আমরা টাকা কোথায় পাবো? আমাদের কি কোন অধিকার নেই সরকারের দেয়া ঘর পাওয়ার?
কিসামত কাদিখোল এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা (৪০) বলেন, আমি আবেদন করলে ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গির হোসেন ময়নুল আমার কাছে টাকা দাবী করেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তিনি আমার নাম বাদ দেন। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানালে তারা আবার আবেদন করতে বলেন। কিন্তু তারপরও আমি ঘর পাইনি। অথচ আশেপাশের টাকা ওয়ালা মানুষগুলো টাকার বিনিময়ে ঘর পেয়েছে।
এভাবে অভিযোগ করেন পোড়ারহাটের মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে মিজানুর (৪২). ১ নং ওয়ার্ডের মুসলেমের স্ত্রী অমেদা (৩৮) সহ মানববন্ধনে আগত সকল লোকজন। তারা কান্নাভেজা কন্ঠে সাংবাদিকদের কাছে তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন এবং একটি ঘর পাইয়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন। তাদের কান্নার রোলে পথচারীরাও থমকে দাড়িয়ে পড়েন।
তারা বলেন, জনপ্রতিনিধিরাই যদি গরীব দুঃখী অসহায় মানুষদের না দেখে তাহলে কারা দেখবে আর প্রশাসনকে জানানোর পরও তারা যদি এই দুস্থদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে কার কাছে যাবো আমরা? আর কতবার আবেদন করার পর একটি ঘর পাবো আমরা? আর যদি না পাই তাহলে কেন আবেদন করার জন্য বলা হয় আর অহেতুক আমাদেরকে আশ্বাস দিয়ে হয়রানী করা হয়। স্পস্টভাবে জানিয়ে দিলে আমরা কখনই আবেদনও করবোনা আর মিথ্যে আশায়ও থাকবোনা।
এব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশ্রয়নের ঘর বরাদ্দ চলমান প্রক্রিয়া। আমরা যেখানে খাস জমি পাই সেই অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাই। বরাদ্দ পেলে ঘর তৈরী করে আবেদন যাচাই বাছাই করার মাধ্যমে প্রকৃত দুস্থ, অসহায় ও ভূমিহীন ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী ঘরের সংখ্য সামান্যই। তবে আমরা সচেষ্ট থাকি উপযুক্তদেরকে দেওয়ার। তারপরও যারা পায়নি তাদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আগামীতে আরও বরাদ্দ আসবে তখন আবেদনকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই আন্দোলনকারীদের দেওয়া হবে। আর চেয়ারম্যান মেম্বাররাসহ কেউ যদি এব্যাপারে অর্থ নিয়ে থাকে তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপুর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।