আষাঢ়-শ্রাবনের বৃষ্টির উপর নির্ভর করেই কৃষক আমন ধান চাষ করে থাকেন। বর্ষাকালে জমিতে জমে থাকা পানি দিয়ে বীজতলাসহ চারা রোপনের কাজ করেন কৃষক। কিন্তু এবার নীলফামারীতে ভরা মৌসুমে বৃষ্টির দেখা নেই। চলতি শ্রাবণ মাসেও মাঝে মধ্যে ছিঁটে ফোঁটা বৃষ্টি হলেও তা আমন ধান রোপনে কাজে আসছে না। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে মৌসুমি বৃষ্টি না হওয়ায় আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করে চারা রোপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ যাবত সাত হাজার ২৩৪টি সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে ২৫ হাজার ৯৭৮ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হয়েছে। যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে, গভীর নলকুপ ২৬টি, অগভীর বিদ্যুৎ চালিত পাঁচ হাজার ৬০টি, অগভীর ডিজেল চালিত এক হাজার ৯৯৬টি ও অন্যান্য রয়েছে ১৫২টি।
নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক মাহাবুল ইসলাম জানান, ‘প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে রোপা আমন চাষ তো দূরের কথা, অধিকাংশ কৃষক এখনো পাট কাটতে পারেননি। যারা ইতোমধ্যে জমি থেকে পাট কেটেছে, তারা কৃত্রিম উপায়ে নিজস্ব খরচে গর্ত ভরাট করে পাট পচানোর ব্যবস্থা করছে। এ মাসে প্রয়োজন মত বৃষ্টি না হলে চলতি রোপা আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করছেন।’
একই গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী জানান, ‘প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারও আট বিঘা জমিতে আমন ধান চাষের প্রস্ততি নিয়েছি। কিন্ত আকাশের বৃষ্টি নাই। আর এই জমির উৎপাদিত ধান দিয়েই আমার পরিবারের সারা বছরের খরচসহ চালের চাউলের চাহিদা মিটে যায়। আগাম বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের বীজতলা করতেও দেরি হয়েছে।’
উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দীঘলটারী গ্রামের কৃষক আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘প্রত্যেক বছরের ১০-১২ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করেন তিনি। কিন্তু গত দুই-তিন বছর বৃষ্টি না হওয়ায় আমন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বীজতলা তৈরি করতেও অনেক দেরি হয়েছে। অথচ এখন রোপা আমনের ভরা মৌসুম। কিন্তু এলাকার কৃষক বৃষ্টির অভাবে এখনো চারা রোপন করতে পারেননি। তাঁদের মতো জেলার অন্যান্য কৃষকরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। আবার অনেকেই কৃত্রিম উপায়ে সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে রোপা আমন চাষ শুরু করেছেন।’
নীলফামারী পৌর শহরের নিউ বাবুপাড়ার কৃষক মজিদুল ইসলাম, মহুবার রহমান জানান, ‘আকাশের বৃষ্টির আশা ছেড়ে দিয়ে বিদ্যুৎ চালিত শেষ পাম্প দিয়ে আমন ধানের চারা রোপন করছি। প্রচন্ড তাপদহে বীজতলা পুড়ে যাচ্ছে, তাই বাদ্য হয়ে সেচের পানি দিয়ে ধান লাগাচ্ছি। এতে খরচের পরিমানও বেড়ে যাচ্ছে। দেখি ভাগ্যে কি আছে। তাঁরমত কৃষক মহুবার রহমান একই কথা বলেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয় উপজেলায় এক লাখ ১৩ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে অর্জিত জমির পরিমান ৫০ হাজার ৫৭১ হেক্টর। চালের এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৫৩ হাজার ৪২৮ মেট্রিকটন।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রাসরণ কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ জানান, ‘এবারে সদরে পৌরসভাসহ ১৬ টি ইউনিয়নে মোট ২৮ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে অর্জিত জমির পরিমান হলো ১৫ হাজার হেক্টর। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্পুরক সেচ দেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাছে। এ পর্যন্ত উপজেলায় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ সেচ যন্ত্র চালু করা হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, ‘জেলায় এক লাখ ১৩ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এ যাবত অর্জিত হয়েছে ৫০ হাজার ৫৭১ হেক্টর। এর বিপরীতে সেচ যন্ত্র রয়েছে, সাত হাজার ২৩৪টি। তিনি বলেন, এখনো আমন মৌসুম শেষ হওয়ার এক থেকে দেড় মাস বাকি আছে। তার পরও মাঠ পর্যায়ে আমনচাষীদের সেচ যন্ত্রের মাধ্যমে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করে চারা রোপনের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে, ছয় উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ।’