নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক ভূমিহীন পরিবারকে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করার অভিযোগে রাস্তায় বসে সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারটি। গতকাল সোমবার (১২ জুন) বিকাল ৪ টায় সৈয়দপুর শহরের বাঙ্গালীপুর দরুল উলুম মাদ্রাসা সড়কের উপর বসেই সংবাদ সম্মেনে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
তারা জানান, কোন রকম নোটিশ বা মালামাল সরানোর সুযোগ না দিয়েই মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই বাসা খালি করতে বলা হয়। আমরা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ওই বাসাতেই বসবাস করতেছি।
তারা লিখিত বক্তেব্যে আরও বলেন, আমাদের বাস্তুুভিটা ফিরিয়ে দেয়াসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। ঘরের জিনিসপত্রসহ বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে বাড়ি দখল করায় বৃদ্ধ বাবা, চার বোন, ভাই, স্ত্রী ও শিশু সন্তানানকে নিয়ে গত দুইদিন যাবত রাস্তায় মানবেতরভাবে দিনাতিপাত করছি।
ওই পরিবারের ছেলে শাহাজাদা বলেন, আমরা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বাঙ্গালীপুর মৌজার জিএল নং ৩৮, খতিয়ান নং ৪০২, দাগ নং ২২৫ তফশিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির ৯ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক জমির উপর নির্মিত বাড়িতে বসবাস করছি। কয়েকবছর পূর্বে প্রতিবেশী হাফিজুল্লাহ এই জমি তার বলে দাবী করে আমাদের উচ্ছেদের জন্য অপচেষ্টা চালায়। তার কথায় বাড়ি ছেড়ে না দেয়ায় নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে।
এমতাবস্থায় আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমিটি লিজ নেয়ার জন্য আবেদন করি। যা প্রক্রিয়াধীন থাকাবস্থায়ই হাফিজুল্লাহর সাথে যোগসাজশ করে শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জমিটি তাঁর নামে করে নিয়েছে বলে জানায়। কিন্তু আমাদের দখলে থাকতে এবং আমরা লিজের আবেদন করা সত্বেও কিভাবে জমি তাঁর নামে হয়েছে? এখানে নিশ্চয়ই অনিয়ম বা দূর্নীতি করা হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। এরই মাঝে গত ১০ জুন আলতাফ হোসেন পুলিশ ও প্রশাসনকে নিয়ে এসে মাত্র ১ ঘন্টায় আমাদেরকে বাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে। আমরা অসহায় অবস্থায় রাস্তায় দিনাতিপাত করছি। আমাদেরকে আগে কোন নোটিশ দেয়া হয়নি বা মালামাল সরানোর জন্যও সময় দেয়নি।
আমরা ভূমিহীন দরিদ্র মানুষ। সরকারী অর্পিত সম্পতিতে বসবাস করতাম। আমাদের মাথাগোঁজার সেই ঠাইটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের নিজে বাড়ি করে দিচ্ছেন। প্রশাসন আমাদের গ্রেফতার করার হুমকি দিয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিধায় তাৎক্ষণিক প্রশাসনের কথামত বাড়ি থেকে বের হয়েছি। কিন্তু গত দুইদিন ধরে বাড়ির সামনের রাস্তাতেই অবস্থান করছি। বাস্তুুভিটা ফিরে না পেলে আমরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবো। তাই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে তিনি আমাদের অসহায়ত্ব ঘুচান। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সেই আবেদন জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বৃদ্ধ সোহরাবের আরেক ছেলে শাহাবাজ (৫৫), তার স্ত্রী শাপলা আক্তার (৫০), ছেলে জুনায়েদ (০৫), চার বোন যথাক্রমে বিলকিস (৫৬), আফসানা (৪৫), সাবানা (৩৫), শাহজাদী (৪০) সহ এলাকাবাসী। তারা সবাই আর্তনাদ করে বলেন, আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে দেন নয়তো বিষ দেন।