সোমবার , ১০ মার্চ ২০২৫ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. আবহাওয়া
  6. ই-পেপার
  7. কৃষি
  8. খেলাধুলা
  9. গল্প ও কবিতা
  10. জাতীয়
  11. জীবনযাপন
  12. ধর্ম
  13. প্রযুক্তি
  14. বাংলাদেশ
  15. বিনোদন

সচেতনতা ও সতর্কতাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধের সর্বোত্তম উপায়

প্রতিবেদক
বার্তা প্রতিবেদক
মার্চ ১০, ২০২৫ ৩:৪৮ অপরাহ্ণ

সচেতনতা ও সতর্কতা আপাতদৃষ্টিতে একই মনে হলেও এই দুইটির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ইন্দ্রিয় সজাগ রেখে কোনো কাজ করাকে সতর্কতা বলা হয়। আর পূর্ব থেকে কোনো বিষয়ে অবগত থেকে সতর্কতা অবলম্বন করাকে সচেতনতা বলা হয়। অর্থাৎ সচেতনতা হলো সতর্কতা অবলম্বনের পূর্ব ধাপ। গাড়ি চালানোর সময় দুটিই অত্যন্ত প্রয়োজন। গাড়ি চালানোর সময় চালকের মনে পড়ল সামনে দুই কিলোমিটার পরে সরু রাস্তা আছে। তিনি সচেতন হলেন এবং সতর্কতার সঙ্গে সরু রাস্তাটি অতিক্রম করলেন। যে বিষয়কে কেন্দ্র করে সচেতনতা ও সতর্কতা বিষয়ের অবতারণা তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। এটি এমন একটি বিষয় যা প্রতিকার নয় প্রতিরোধই সর্বোত্তম উপায়। আর প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সচেতনতা ও সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

প্রতিদিন সংবাদপত্রের পাতায় কিংবা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় যে বিষয়টি এড়ায় না তা হলো সড়ক দুর্ঘটনার খবর। এই খবর দেখতে দেখতে কিংবা শুনতে শুনতে এমন হয়ে গিয়েছে বড়ো কোনো দুর্ঘটনা না হলে, আমাদের বোধকে আর তেমন নাড়া দেয় না। কিন্তু যার ক্ষেত্রে ঘটে তিনি কিংবা তার পরিবার সেটা বুঝে।

বাসা-বাড়িতে ঘুমানোর সময় ব্যতীত বাঁকিটা সময়ের কোনো না কোনো কাজে মানুষকে সড়ক পাড়ি দিতে হয়। কখনো কখনো এই পাড়ি দেওয়া হয়ে যায় কারো জন্য শেষ পাড়ি দেওয়া, কারো জন্য সারাজীবনের কষ্ট  এবং কারো জন্য সাময়িক অসহ্য যন্ত্রণা কারণ।   

বলা হয়-একটি সড়ক দুর্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। যখন কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তখন একে অপরকে দোষারোপ করার তর্কে লিপ্ত হই। কিন্তু কেউ নিজের দায় মেনে নিতে চাই না। আসলে অনেক কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে।

গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, গাড়িচালক ও পথচারীদের অসচেতনতা, অসতর্কতা ও যানবাহনের অতিরিক্ত গতি অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। মহাসড়কে অপরিকল্পিত স্পিডব্রেকার বা গতিরোধকগুলোও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়কের পাশে হাটবাজার বসা, চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব ইত্যাদি কারণেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। একজন চালক একটানা চার-পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় গাড়ি চালাবেন, এটাই নিয়ম। অনেক পরিবহণ মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না কিংবা দেশের কোনো চালকই এই নিয়ম পালন করেন না। ফলে একজন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত চালক যখন গাড়ি চালান, তখন স্বভাবতই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বেশি। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বিরামহীন গাড়িচালনা, অত্যধিক গতিতে গাড়ি চালনা, প্রতিযোগিতার মনোভাব এবং চালকের অসাবধানতার কারণে।

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ মারা যান। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, ২০২৪ সালে দেশে ছয় হাজার ৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ হাজার ১৯ জন। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ, আর প্রাণহানি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। আহত বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। রোড সেফটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এসব দুর্ঘটনায় মানবসম্পদের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ২১ হাজার ৮৮৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, কোনো মানুষ সড়ক দুর্ঘটনার কারণে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হলে তিনি এবং তার পরিবার সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

কিছু কার্যকরী ও সমন্বিত নিরাপত্তা নীতি এবং কার্যক্রম সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। নিরাপদ সড়ক ডিজাইন এবং সড়কের সময়োপযোগী ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করতে পারে। অতিরিক্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে স্বল্প ব্যয়ের নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন বেশি কার্যকরী হয়। নিয়মিতভাবে সড়কের নিরাপত্তা পরীক্ষা (রোড সেফটি অডিট) নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। যানবাহন নিরাপত্তার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে যে কোনো পরীক্ষা কার্যক্রমে টায়ার, ব্রেক, লাইট, স্টিয়ারিং এবং রিফ্লেক্টরের মতো মৌলিক জিনিসের উপর সমধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

সকল সড়ক ব্যবহারকারী বিশেষ করে ড্রাইভার, পথচারী, আরোহীদেরকে স্বেচ্ছায় আইন পালনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কিত উন্নততর গণশিক্ষা কার্যক্রম, ড্রাইভারদের যথাযথ দিকনির্দেশনা প্রদান প্রভৃতি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। বেপরোয়াভাবে গাড়ী চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল বহন, মাদকসেবন প্রতিরোধে এবং গতি নিয়ন্ত্রণে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও এর কার্যকরী প্রয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজন। ট্রাফিক আইন অনুসরণ-সঠিক পদ্ধতিতে রোড মার্কিং, সিগন্যাল ও সাইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং তা মেনে চলাও সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ভূমিকা রাখতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও থেমে নেই। রাস্তায় প্রতিযোগিতা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এই প্রতিযোগিতা লক্ষ্য হলো একটু আগে পৌঁছানো বা সময় বাঁচানো। কিন্তু মৃত্যুর কাছে সময়ের মূল্য বেশি হতে পারে না। তাই রাস্তায় প্রতিযোগিতার মনোভাব পরিহার করতে হবে।

আইন, আইনের প্রয়োগ, কার্যকর ব্যবস্থা থাকা সত্বেও গাড়িচালক ও পথচারীর সচেতনতা ও সতর্কতা ছাড়া দুর্ঘটনা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব নয়। কারণ অনেক দেশে উন্নত ব্যবস্থাপনা ও আইনের সঠিক প্রয়োগের ফলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশেই হ্রাস পেলেও শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। যদিও মৃত্যুর উপর কারও হাত নাই তবু্ও স্বাভাবিক মৃত্যুর চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যু সহজে মেনে নেওয়া কঠিন। যখন সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হন বা আহত হন তখন অনেক জল্পনার উদ্রেক হয় যে, যদি সেখানে না যেত তাহলে এমন হতো না। অনেকটা চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার মতো অনেক কিছু মাথায় কাজ করে। সবশেষে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, সচেতনতা ও সতর্কতাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধের সর্বোত্তম উপায়।

সর্বশেষ - নীলফামারী