নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা যমুনেশ্বরী নদীটি নাব্যসংকটের কারনে মরা খালে পরিণত হয়েছে। যমুনেশ্বরী নদীর বুক জুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। শুধু বোরো ধান নয় রবিশস্য হিসাবে আলু, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হয় এই নদীর জেগে উঠা চরে। নদীর দুই পাড়ে তাঁকালে মনে হয় যেন, নীল আকাশের নিচে সবুজ গালিচা পেতে আছে সবুজ প্রকৃতি।
জানা গেছে, যমুনেশ্বরী নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশের উত্তরের জেলা নীলফামারী হয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রবেশ করেছে। নদীটির পুর্বের নাম ছিল দেওনাই নদী। নদীটি বাংলাদেশের নীলফামারী ও রংপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১১৬ কিলোমিটার , গড় প্রস্থ ৫০ মিটার । যমুনেশ্বরী নদী অববাহিকার আয়তন ৭০০ বর্গকিলোমিটার। প্রাচীন বরেন্দ্রভুমির এই অঞ্চল ফসল ও ফলমুল উৎপাদনে বহুকাল বিখ্যাত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর দুই পারে জেগে উঠা চরে একরের পর একর জমি জুড়ে আবাদ করা হয়েছে বোরো ধান, ভুট্টা, গম, বাদাম, আলু, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন রবি শশ্য ও শাকসবজি। ফষলের এসব ক্ষেতে কাজ করছেন নারী পুরুষসহ অসংখ্যা শ্রমিক। কেউ ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন, কেউ নিড়ানী করছেন, আবার কেউ কেউ মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া ও শাকসবজি তুলে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।
নদীপারের কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, আমরা যেগুলো জমিতে মিষ্টি কুমড়া, বোরো ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করছি এই জমিগুলো ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে ভাল ছিল। প্রতি বছর বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার কারনে নদী তীরের জমিগুলো অল্প অল্প করে ভেঙ্গে গিয়ে নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। গত ২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে নদীটি খনন করার পর নদীর দুই দিকে জমিগুলোতে আমরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতে পারছি। উত্তর দুরাকুটি মাছুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক তোফায়েল মিয়া বলেন, আমরা শুকনো মৌসুমে নদীর জেগে উঠা চড় ও আশেপাশের জমিগুলোতে বোরোধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতে পারি কিন্তু বর্ষার সময় নদীতে বেশি পানি হওয়ার কারনে নদী তীরতো দুরের কথা আশাপাশের সব জমি পানিতে তলিয়ে যায়। ওই কৃষক বলেন, নদীটি পুনরায় খনন করা হলে নদী তীরের অনেক জমি চাষাবাদের উপযোগী হত।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, যমুনেশ্বরী নদীটির দুই তীরে জেগে উঠা চড়ে কৃষকরা কৃষকরা বোরো ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেছেন। তিনি আরো বলেন, বন্যা পরবতী সময় মাটিতে পলি পরার কারনে এসব জমিতে আবাদ খুব ভাল হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি হকের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, যমুনেশ্বরী নদীটি কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছে। কিশোরগঞ্জ হাসপাতাল সংলগ্ন বীজের উপর থেকে যমুনেশ্বরী নদীর বুক জুড়ে সবুজের অপুরুপ সৌদর্য দেখে মন ভরে যায়। এই নদীর বুক জুড়ে উৎপাদিত ফসল অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখছে।নদীটি পুনরায় খননের বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, এ বিষয়ে উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।