সৈয়দপুরে রেলেওয়ের পরিত্যক্ত জায়গায় মেডিকেল কলেজ নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন

নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ঘনবসতিপূর্ণ স্থানের পরিবর্তে ফাঁকা স্থানে স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। সোমবার (২৭ জানুয়ারী) বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত আড়াইঘন্টা ব্যাপি ওই কর্মসূচি পালন করে সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন স্মৃতি অ¤¬ান চত্বরের সামনে। এসময় শহরের সাহেবপাড়া, গার্ডপাড়া, পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডবাসী সহ এলাকার শত শত নারী-পুরুষ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন।

উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর পৌরসভার ১৩নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন গুড্ডু, সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর রুবিনা বেগম, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের সংগঠন স্টান্ডার্ড পাকিস্তানিজ জেনারেল রিহাবিলিটেশন কমিটি (এসপিজিআরসি) সৈয়দপুর শাখার সভাপতি রিয়াজ আকবর, মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাহেবপাড়ার বাসিন্দা যাদুশিল্পী মনোয়ার হোসেন।

এসময় বক্তারা বলেন, জীবন থাকতে রেলহাসপাতাল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হতে দিবো না। যেখানে সরকার আশ্রয়হীনদের পূণর্বাসনের কথা ভাবছে সেখানে আমাদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা নিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আমরাও মেডিকেল কলেজ চাই, কিন্ত গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করে নয়। বিকল্প স্থানে বা ফাঁকা মেডিকেল কলেজ স্থাপনের তারা অন্তবর্তীকালিন সরকারের কাছে দাবি জানান। এসময় বক্তারা আরো বলেন, ২৪ এর জুলাই গণঅভ‚ত্থানের সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে বিতর্কিত করার প্রয়াসে গভীর যড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসররা। এ শহরে প্রভাবশালীরা রেলের স¤পদ দখলের মহৎসবে মেতে উঠেছে। রেল কতৃপক্ষ উদ্ধার না করে, লোক দেখানো মামলা করছে। তাই এক দফা, এক দাবী। পরিত্যাক্ত জায়গায় মেডিকেল কলেজ করতে হবে। না হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলে মানববন্ধন থেকে হুশিয়ারী দেন বক্তারা।

মানববন্ধন শেষে একটি স্মারকলিপি দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক (ডিএস) এর হাতে তুলে দেন।

এ ব্যাপারে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত¡াবধায়ক (ডিএস) মোস্তফা জাকির হাসান জানান, স্মারকলিপি পেয়েছি। রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনাটি উর্ধ্বতন মহলের। তবে এলাকাবাসীর দাবি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

রেলের পূর্তবিভাগ সূত্র জানায়, সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালকে ঘিরে একটি রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ইতিপূর্বে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এলাকায় রেলওয়ে জমি দখল করে ৭৮টি পরিবার বসবাস করছে। সাহেবপাড়া ও গার্ডপাড়া এলাকায় ৭২ জন রেলের কর্মচারীর নামে কোয়ার্টার বরাদ্ধ রয়েছে।

একটি নির্ভোরযোগ্য সূত্র জানায়, সৈয়দপুর শহরে রেলের ৭৯৯.৯৮ একর রেলের জমির মধ্যে ৪৪২ একর বেদখল হয়েছে। এর মধ্যে ১০ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের অংশে ছিল প্রায় দেড়শত একরের ওপর ইটভাটা, কৃষি জমি ও জলাশয়।
সাবেক কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন গুড্ডু অভিযোগ করে সাংবাদিকদের জানান, ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে রেলের ওই জমিগুলো তাদেরই নেতাকর্মীরা নামে বেনামে দখলে নিয়ে কোটিপতি হয়েছে। ওই পরিত্যাক্ত জায়গাগুলোতে রেলবিভাগ যাতে দখলে নিতে না পারে, এরজন্য রেলের মেডিকেল কলেজটি পরিকল্পিত ভাবে ফ্যাসিষ্ট হাসিনার আমলে রেলের হাসপাতাল এলাকায় নির্ধারণ করে। তবে পরিপত্রে বলা হয়েছে, মেডিকেল কলেজ নির্মাণে সরকারি পরিত্যাক্ত জায়গা লাগবে। তবে ফ্যাসিষ্ট সরকারের দোসর অফিসাররা এই জায়গা নির্ধারণ করে বরাবরই রেলওয়ের পরিকল্পিত উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ করেছে। ফ্যাসিষ্টটা পালালেও এখন তাদের লোকজন ষড়যন্ত্র করে দুই হাজার পরিবারকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে।

সৈয়দপুর উর্দুভাষী ক্যা¤প এসপিজিআরসির সভাপতি রেয়াজ আকবর সাংবাদিকদের বলেন, তারা বিশাল সংখ্যক মানুষজন বিতাড়িত করে সৈয়দপুর শহরের রেলওয়ে হাসপাতাল এলাকায় ৫০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করবে। এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া হবে না। কারণ এ শহরে রেলের প্রায় ৩ শত একর পতিত জমি রয়েছে। সেখানে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কাজ করলে এ শহরের যেমন পরিকল্পিত উন্নয়ন ঘটবে। সৌন্দর্য বাড়বে শহরের।

সাবেক মহিলা কাউন্সিলর রুবিনা শাকিল সাংবাদিকদের বলেন, যদি মেডিকেল কলেজটি রেলের পরিত্যাক্ত জায়গায় করা হয় তাহলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার স¤পদ উদ্ধার হবে। রেলের পরিত্যাক্ত জায়গার, যাতে উদ্ধার তৎপরতা শুরু না হয় এর জন্য একটি কুচক্রিমহল কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৫০ আসনের রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও বিদ্যমান রেলওয়ে হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিগত ২০১২ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ সৈয়দপুর ৫০ আসনের রেলওয়ে মেডিকেল কলেজ স্থাপন এবং বিদ্যমান রেলওয়ে হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি পেয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অধীনে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনাশিপ কর্তৃপক্ষের আওতায় বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি। গত ২০১৩ সালে ১৪ আগস্ট নীতিগত অনুমোদন হয় প্রকল্পটির। প্রকল্পের কার্যপরিচালনা উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত হয়েছে সিনার্জি কনসাল্টিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার সার্ভিস। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২২ সালের ২৭ জুন চুক্তি স¤পাদনের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত কার্যস¤পাদন উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক খসড়া সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দাখিল করে।

  • Related Posts

    চিরিরবন্দরে আন্দোলনের গ্রাফিতির ওপর ‘জয় বাংলা’ লিখল কারা?

    কাঞ্চন সরকার, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের স্মরণ নিয়ে দেয়ালে অঙ্কন করা গ্রাফিতির ওপর জয় বাংলা ও ছাত্রলীগ স্লোগান লিখে দেয়া হয়েছে। এ…

    Continue reading
    চিরিরবন্দরে ৭ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ চরম ভোগান্তি

    ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে কাঁকড়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ দীর্ঘ ৭ বছরেও শেষ না হওয়ায়  চলাচলে লোকজনকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ…

    Continue reading

    সকল

    চিরিরবন্দরে আন্দোলনের গ্রাফিতির ওপর ‘জয় বাংলা’ লিখল কারা?

    চিরিরবন্দরে আন্দোলনের গ্রাফিতির ওপর ‘জয় বাংলা’ লিখল কারা?

    চিরিরবন্দরে ৭ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ চরম ভোগান্তি

    চিরিরবন্দরে ৭ বছরেও শেষ হয়নি সেতুর নির্মাণ কাজ চরম ভোগান্তি

    জলঢাকায় শিক্ষক-কর্মচারী ক্রেডিট ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

    জলঢাকায় শিক্ষক-কর্মচারী ক্রেডিট ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

    নীলফামারীর ডিমলায় হিমাগার না থাকায় ক্ষেত থেকে তুলছেন না আলু

    নীলফামারীর ডিমলায় হিমাগার না থাকায় ক্ষেত থেকে তুলছেন না আলু