সৈয়দপুরের গোলাহাট জেনোসাইড দিবসে শ্রদ্ধা, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি

নীলফামারীর সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছে ঢাকা থেকে আগত আমরা ৭১’ নামে একটি মানবিক সংগঠন। ৭১ এর জেনোসাইডে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের দাবি নিয়ে কাজ করেন ওই সংগঠনটি। মঙ্গলবার (১৩ জুন) দুপুরে সৈয়দপুর জেনোসাইডের ৫২ বছর শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন কর হয়।
উপজেলার গোলাহাট বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আমরা ৭১ এর প্রধান সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক হেলাল ফয়েজী।
সভাপতির বক্তব্যে আমরা ৭১ এর প্রধান সমন্বয়ক বলেন, গোলাহাট বধ্যভূমিটি হচ্ছে ৭১ এর নৃশংসতার প্রধান সাক্ষী। সৈয়দপুরের হিন্দু মাড়োয়ারীদের ট্রেনে তুলে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গোলাহাটে নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। তিনি বলেন, আমাদের সংগঠন জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য দেশে-বিদেশে কাজ করছি। তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের নাম তালিকাভূক্ত করতে দ্রুত কাজ করতে হবে। সৈয়দপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য শহীদ ডা. জিকরুল হকের নামে সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণের দাবি জানান সংগঠনটি।
এর আগে ‘আমরা ৭১’ এর সদস্যরা গোলাহাট বধ্যভূমিতে পুষ্মাল্য অর্পণ করেন ও শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে প্রতিনিধি দলটি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় স্থাপিত অদম্য স্বাধীনতায় শহীদদের স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। তাঁরা গোলাহাট বধ্যভূমিসহ সারাদেশের বধ্যখূমিরগুলোর মাটি নিয়ে উত্তরবঙ্গ জাদুঘরে একটি মানচিত্র তৈরি করার কথা বলেন।
উত্তরবঙ্গের জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আব্রাহিম লিংকনের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন আমরা ৭১ এর সমন্বয়ক মাহমুদা জেসমিন, চট্টগ্রামের শহীদ সন্তান ও জেনোসাইড বিশেষজ্ঞ প্রদীপ কুমার দত্ত, কুড়িগ্রাম জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি, কবি জ্যেতি আহমদ, গোলাহাট ট্রেন হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী (কালের সাক্ষি) তপন কুমার দাস, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সন্তান এম আর আলম ঝন্টু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রত্যক্ষদর্শী তপন কুমার দাস জানান, ১৯৭১ এর ১৩ জুন শহরের গোলাহাট এলাকায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ৪৪৭ জন নারী পুরুষকে। শহরের একমাত্র স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে ওই সময়ে অবাঙালীদের বসবাসের কারণে সেখানেই বিভিন্ন জায়গা হতে বাঙালীদের হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। অদ্যাবধি ওই স্থানটিকে চিহ্নিত করা হয়নি এবং নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিন্তম্ভ। গোলাহাটে স্থানীয় উদ্যোগে একটি স্মৃতিসৌদ্ধ নির্মান করা হলেও সৈয়দপুর স্টেডিয়াম গণহত্যার স্থানটি মুছে যাচ্ছে স্বাধীনতার ইতিহাস থেকে। মূলতঃ এলাকাটি বিহারী অধ্যুষিত হওয়ায় রাজনৈতিক পালা বদলের শিকার মুক্তিযুদ্ধে নিহত সেদিনের শহীদরা।

  • Related Posts

    সৈয়দপুর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সম্মেলন

    বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সৈয়দপুর শাখার উনবিংশ শাখা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় স্থানীয় রেলওয়ে মুর্তজা মিলনায়তনে ওই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ…

    Continue reading
    শানের কণ্ঠে ‘শ্যাম কালিয়া’

    বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে প্রতিভাবান গায়ক শান সায়েক। স্বতন্ত্র এবং প্রাণবন্ত কণ্ঠের এই গায়ক একই সঙ্গে সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও সুপরিচিত। সম্প্রতি নতুন বছর উপলক্ষে আধুনিক লোকসঙ্গীত গানের ভিডিও নিয়ে শ্রোতাদের…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি