নীলফামারীতে কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য মৃৎশিল্প

কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। নীলফামারী সদর উপজেলা ও সৈয়দপুর উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প দুইটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নানাবিধ সমস্যার কারণে আজ বিলুপ্তির পথে।

এক সময়ে মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে কুমার পাড়ায় মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তারা তৈরী করতেন রান্না ও গৃহস্থালি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন রকমের হাঁড়ি-পাতিল, সরা, থালা, বাটনি, দোনা, ঝাঁজর, মটকি, চাড়ি, কোলকি, কড়াই, কুয়ার পাট, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার রঙিন পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি রঙিন পশুপাখি, ফুলের পাত্র, পানি বর্জ্য জল পাইপ, ইট, বিভিন্ন ভাস্কর্য সহ আরো অন্যান্য।

এখন আধুনিক কাঁচ,অ্যালুমিনিয়াম, সিরামিক,মেলামাইন ও প¬াস্টিকের তৈরি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্পটি। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন এ পেশায় জরিতরা। নীলফামারী সদর ও সৈয়দপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মৃৎশিল্পীদের সাথে কথা বললে তারা বলেন, একসময় মাটির তৈরির রকমারী দিয়েই মানুষের পরিবারের চাহিদা পূরণ হতো। তখন আমরা এসব পণ্য পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে পরিবার নিয়ে ভালো ভাবে চলতে পারতাম। কিন্তু এখন প¬াস্টিক ও অ্যালুমেনিয়াম,সিরামিকস এর চাপে আমরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছি।

সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেল পুকুর ইউনিয়নের চওড়া পালপাড়ার অমল চন্দ্র পাল (৬২) বলেন, এখন আমরা বিভিন্ন পূজাপার্বণে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি মাঠে দিন মজুরি কাজ করে যা রোজগার করি তা দিয়ে চালাই সংসার। মৃৎশিল্প আগের মতো না চলায় বাধ্য হয়ে গুটিয়ে নিয়েছি। আগে মৃৎশিল্প নির্ভর করে জীবিকা চলত। আমরা ৩২০টি পরিবার বসবাস করলেও প্রায় ২০০টির বেশি পরিবার তাদের বংশীয় পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশা শুরু করেছে।

নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দুপুকুর কুমার পাড়ার মনমোহন পাল বলেন, একসময় জমি থেকে অল্প টাকা দিয়ে এঁটেল মাটি ক্রয় করতে পারতাম। তবে এখন দেশে বেড়েছে ইটের ভাটা। যার কারণে মাটি সংগ্রহ করাটাও হাতের নাগালের বাহিরে হয়ে গেছে। অথচ মাটির তৈরী জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বাড়েনি। এ জন্য বেশি দামে মাটি ও খড়ি কিনে এসব জিনিসপত্র তৈরি করে আগের মতো লাভ হয় না। তবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হারিয়ে যাওয়া এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয় এসব মৃৎশিল্পীরা।

এবিষয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের সময় প্রতিবেদককে জানান, মৃৎশিল্পের সাথে সংশি¬ষ্ট ব্যক্তিরা অতিকষ্টে দিন যাপন করছেন, এটি আমার জানা নেই। তবে এই শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা আমার সাথে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Related Posts

আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের উদ্বোধন

নীলফামারীর ডিমলায় ডিমলা মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শনিবার রাতে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২৫ এর ট্রফি উন্মোচন ও উদ্বোধন করেন ডিমলা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও আরাফাত…

Continue reading
নীলফামারীতে ১২তম রংপুর বিভাগীয় জেলা পর্যায়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

নীলফামারীর ৬ উপজেলায় কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের সন্তানদের নিয়ে ১২তম বার্ষিক রংপুর বিভাগীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চুড়ান্ত প্রতিযোগী বাছাই ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার(১৮ জানুয়ারী) সকাল ১০টার দিকে…

Continue reading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

মুক্ত মতামত

বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি