এসিসিএফ ব্যাংকের টাকা ফেরত না পেয়ে গ্রাহকরা হতাশ

আজিজ কো-অপারেটিভ কর্মাস অ্যান্ড ফাইন্যান্স (এসিসিএফ) ব্যাংক এর গ্রাহকরা জমানো টাকা ফেরত না পেয়ে হতাশ। জমাকৃত আমানতের প্রায় দেড় কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদ শাহ্ এর বিরুদ্ধে।


জাহিদ জেলা সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের জাকির হোসেন শাহ্ এর ছেলে এবং এসিসিএফ ব্যাংকের ম্যানেজার।
এ ব্যাপারে, জেলা সমবায় কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, কো-অপারেটিভ শব্দটি ব্যবহার করা হলে সেটি সমবায়ের মাধ্যমে নিবন্ধন করে একটি নিদৃষ্ট জেলায় শাখা চালাতে পারবে। যে জেলার জন্য নিববন্ধন শুধু সেই জেলায় কার্যক্রম চালাতে হবে। তবে বাহিরের কোন জেলায় শাখা অফিস বসিয়ে ঋণদান কর্মসূচি চালার নিয়ম নাই।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জানামতে নীলফামারীতে এধরণের ব্যাংকের কোন নিবন্ধন বা রেজিষ্ট্রেশন করা হয়নি। পুরোটাই আইনের ব্যাথায় ঘটিয়ে তারা ঋণ দান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। যা সমবায় আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। এমনকি ব্যাংক শব্দটিও তারা লিখতে পারবেনা।


জেলা শহরের কিচেন মার্কেট বড় বাজার এলাকার এসিসিএফ ব্যাংকের বাসার মালিক (সাব্বির ভিলা দ্ধিতীয় তলা) সাব্বির আহমেদ বলেন,‘এক বছর ধরে অফিস ভাড়ার টাকা পাচ্ছিনা। এমনকি ব্যাংকে ২ লাখ টাকাও রেখেছি সেটাও পাচ্ছিনা। এখন অফিস ভাড়ার ও আমানতের টাকা রেখে পথে বসতে হয়েছে। বর্তমানে তারা ফোনও ধরে না। অফিসে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমার টাকাসহ সকল গ্রাহকের টাকা উত্তোলনে দাবি জানাই।


নীলফামারী পৌর শহরের হাড়োয়া এলাকার বাসিন্দা ও ব্যাংকের গ্রাহক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি একজন গরীব মানুষ কুলি মজুরের কাজ করে যে টাকা পাই পুরো টাকাই এসিসিএফ ব্যাংকে রেখেছি। এক মাস আগে টাকা তুলতে গিয়ে দেখি ব্যাংক বন্ধ। আশেপাশের লোকের মুখে শুনতে পাই, আমার মতো অনেকেই টাকার জন্য ঘুরতেছে। আমি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য ওই ব্যাংকে ৬০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম এখন আসলও নাই, লাভও নাই। গলায় ফাঁস দিয়ে মরা ছাড়া কোন উপায় নাই। এদের আমি বিচার চাই।’


সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে, ‘কান্নায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তিনি বলেন, দয়া করে ভাই আপনারা আমার টাকাটা যে করে হউক তুলে দেন। আমি গরীব মানুষ কার কাছে যাব, কোথায় যাব কিছুই বুঝতেছি না। এদের শাস্তির দাবি জানাই।’
সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের ইটাখোলা গ্রামের গ্রাহক মনছুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে এক লাখ ১০ হাজার টাকা ম্যানেজার জাহিদের কথা মতো রেখেছিলাম। সে আমার পরিচিত হওয়ায় কিছু লাভের আশায় সরল বিশ্বাসে আমার কস্টের টাকা তার কাছে রেখেছি। তিনি বলেন, আমার ভিটামাটি কিছুই নাই, পরের জমিতে কাজ করে খাই। অনেক কস্ট করে ছেলে মেয়েদের না খাওয়ায়ে তার কথামতো (এসিসিএফ) টাকাটা জমা রেখেছিলাম। টাকা না পেলে বাড়ীতে আমি মুখ দেখাতে পারবো না। কারণ বাড়ীর সবাই টাকা রাখতে মানা করেছিল। এখন তার ফল পাচ্ছি।


বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে গ্রাহকরা টাকার জন্য ব্যাংকে এসে গেটে তালা দেখতে পায়। গত জুলাই বিপ্লবের পর ৫ আগষ্ট থেকে ব্যাংকের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন ব্যাংকের ম্যানেজার জাহিদসহ সহকর্মীরা।
গ্রাহকরা জানায়, ১৯৮৪ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৮ সালে জুলাই মাসে শহরের কিচেন মার্কেটস্থ বড় বাজারের সাব্বির ভিলায় দ্ধিতীয় তলায় ব্যাংকের কার্যক্রম চালু করেন। তিনি ৬-৭ বছর যাবৎ ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যা পাঁচশতাধিক।


এর আগে ২০১৭ সালে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এসিসিএফ দেশে অনুমোদহীন ১১০ টি শাখা খুলে অবৈধ কার্যক্রম করছে। সেখানে আরও বলা হয়, অতিরিক্ত মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাজ থেকে সঞ্চয় ও স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করছে। এছাড়াও উচ্চহারে সুদ ঋণ দিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোন ব্যাংক নয়, তাই তাদের সাথে কোনও ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম না করার জন্য সবাইকে সর্তক করা হচ্ছে।


গ্রাহক শামিম মিয়া জানায়, আমরা সাত লাখ ৫০ হাজার টাকার চুক্তি অনুযায়ী লাখে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত প্রতিমাসে লাভ দেওয়ার কথা। এখন লাভতো দূরের কথা আসল টাকাই নাই। টাকা তুলতে এসে দেখি ব্যাংক বন্ধ। এছাড়াও, কলেজ ষ্টেশনের বাসিন্দা ও দোকানদার মানিকের ১০ লাখ, শওকত আলীর ৩ লাখ, ওয়াজেদ আলী ৪ লাখ, সুরত আলী ৭ লাখ, আমিনুর রহমান ৩ লাখ, আরব আলী শাহর এক লাখ ৮০ হাজার, আব্দুল মজিদ সাড়ে ৫ লাখ, নূরুজ্জামান বাবলু ৪ লাখ ও জহুরুল ইসলামের ৬০ হাজার, মাসুদ আলম ৩ লাখ ৭৬ হাজার, টাকাসহ একাধিক গ্রাহকের টাকা নিয়ে জাহিদ এখন গা ঢাকা দিয়েছে।
ব্যাংকের গ্রহক মাসুদ আলম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমাকে ‘কবর’ দিয়েছে বাবা। মেয়েটার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। এখন কোন উপায় দেখছি না কি করবো। এদের আমি বিচার চাই।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শাখার একজন কর্মচারি জানায়, বেশি মুনাফার আশায় মানুষ লাখ লাখ টাকা জমা রেখেছে এখানে। ওই টাকা ম্যানেজার তা নিজের নামে রাখতেন। গ্রাহকরা এবিষয় কিছুই জানতো না। এরপর ব্যাংকের কয়েকজন গ্রাহক টাকা তুলতে এসে দেখেন তাদের টাকা নেই। তখন ব্যাংক বন্ধের বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে শতাধিক গ্রাহক টাকা ফেরত নিতে এসে দেখেন ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলছে।


জেলা সমবায় কর্মকর্তা মশিউর রহমান ‘বাংলাদেশের খবরকে’ বলেন, ‘আমার জানামতে নীলফামারীতে এ নামের ব্যাংকের কোন নিবন্ধন বা রেজিষ্ট্রেন নাই। পুরোটাই আইনের ব্যাথায় ঘটিয়ে তারা ঋণ দান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। যা সমবায় আইনে দন্ডনীয় অপরাধ।’’

  • Related Posts

    নীলফামারীতে সদর উপজেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের পুরষ্কার বিতরণ

    “জ্ঞান-বিজ্ঞানে করবো জয়, সেরা হবো বিশ্বময়” এই শ্লোগানকে সামনে নিয়ে নীলফামারী সদর উপজেলা পর্র্যায়ের ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ-২০২৫শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার(১৪ জানুয়ারী) সকালে নীলফামারী সদর উপজেলা পরিষদ…

    Continue reading
    ডোমারে এক যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
    • adminadmin
    • জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

    নীলফামারীর ডোমারে ২০১২ সালে জামায়াতে ইসলামীর অফিস ভাঙচুর ও হামলা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সৌরভ হোসেন (৩৭) নামের এক যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত সৌরভ ডোমার পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি