সৈয়দপুরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও মামলা চলমান সত্বেও স্থাপনা নির্মাণ করে মাদরাসার নামে জমি দখলের অভিযোগ

নীলফামারীর সৈয়দপুর থিম পার্কের সাথে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল করে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা ও মামলা চলমান সত্বেও বিরোধীয় জমিতেকাদেরিয়া তাহেরিয়া সাবেরিয়া সুন্নীয়া মাদরাসার নামে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ মিলেছে। ধর্মীয় অনুভুতি ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে ক্ষমতা ও লোকবলের দাপট দেখিয়ে এই অবৈধ কাজ করছে একটি চক্র। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা সত্বেও কোন সুরাহা হয়নি, বরং উল্টো তাকে হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। ফলে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় ধরণের হাঙ্গামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মাদরাসার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ওই এলাকার ১০২ শতক জমির মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ২০১৬ ইং সালের বায়নানামা মুলে ২০২২ ইং সালে মুল মালিক মেজর শেখ হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে সৈয়দপুর শহরের কয়া গোলাহাট ইসলামবাগ এলাকায় কয়া মৌজাধীন ১৩২ শতক এর মধ্যে ১০২ শতক জমি ক্রয় করি। মাদরাসার উদ্যোক্তা হিসেবে আমার সাথে একই বায়নানামায় ৩ (তিন) জন ১০ শতক করে ৩০ শতক বায়না করেন। আমি মামলা করলে আমাকে মেজর শেখ হাবিবুর রহমান ১০২ শতক জমি দলিল করে দেন। বাকী ৩০ শতক এখন পর্যন্ত মামলাধীন আছে। আমিসহ তারাও ওই জমির মালিকানা পায় নাই। একই মালিক মেজর শেখ হাবিবুর রহমান ২০১৬ সালে আবু বাশার মোহাম্মদ শাহিদ কে ১৪৬ শতক জমি দলিল করে দেন। তিনি ওই জমিতে সৈয়দপুর থিম পার্ক উদ্বোধন করার আগে জমির সীমানা নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি চুক্তিনামা সৈয়দপুর থানায় বসে করা হয়। চুক্তিনামায় উপস্থিত ছিলেন মেজর শেখ হাবিবুর রহমান, মাদরাসার পক্ষে ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন, ও আব্দুর রউফ এবং থিম পার্কের পক্ষে ছিলেন আব্দুল জলিল ও আয়শা খাতুন (উভয়ে জমির মালিক)।
ওই চুক্তিনামা বলে থিম পার্কের ২৮ শতক জমি মাদরাসার দখলে আর মাদরাসার ২৮ শতক জমি থিম পার্কের দখলে। থিম পার্কের মালিক মাদরাসার জমির উপরে কোন প্রকার নির্মাণের কাজ করেন নাই। কিন্তু মাদরাসার নতুন সম্পাদক সাহেদ আলী তার নিজ ইচ্ছায় ৩০ শতকের উপরে কাদেরিয়া তাহেরিয়া সাবেরিয়া সুন্নীয়া মাদরাসার নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের জন্য ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিন সেট ঘর নির্মাণ করেন।
সাহেদ আলী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে খেয়াল খুশিমত প্রতিষ্ঠানটির নামে অর্থ আদায় করে চলেছে। এর প্রতিবাদ করতে গেলে ওই টিন সেট ঘরে তিনটি মাইক লাগিয়েনামাজ ঘরে পরিণত করেছে। ধর্ম অবমাননার নাটক সাজিয়েছে। এতে বাধ্য হয়ে জমির মালিক আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে আদালত এসংক্রান্ত সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত উক্তঘরসহ সকল বিত্তে সকল প্রকার স্থাপনা নির্মাণসহ নতুন করে কোন কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।
কিন্তু সম্প্রতি সাহেদ আলী গং আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাদরাসার পাশে আবু বাশার মোহাম্মদ শাহিদ এর জমিতে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছে। ্এতে বাধা দেয়ায় আমার নিযুক্ত জাফর আলী রমজানীকে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ প্রাণনাশের হুমকি ধামকিও দিয়েছেন। ফলে জাফর আলী রমজানী সৈয়দপুর থানায় গত ১ জানুয়ারী অভিযোগ দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে থানায় উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার জন্য গত ২ জানুয়ারী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেখানে সাহেদ আলী গংরা মাদরাসা কমিটির সাথে আমার জমির অদলবদল সংক্রান্ত তৎকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপস্থিত করতে পারেননি। বিধায় বৈঠকটি অসম্পন্ন রয়ে যায়।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাহেদ আলী, নাসিম, আরমান, মাসুদ গংরা মূলতঃ মাদরাসার নামে জমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। সেই সাথে মাদরাসার অবকাঠামো নির্মাণের নামে সরকারী বেসরকারী দানের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। আব্দুর রউফ, আরমান ও সাহেদ আলী এনাদের জমি ওই ৬ কক্ষ বিশিষ্ট টিন সেটের ঘর বায়না নামা মুলে দখলে রেখেছেন। তাছাড়া আশেপাশে তাদের কোন জমি নাই। সাহেদ আলী, নাসিম, মাসুদ গং আব্দুল্লাহ আল মামুনের ১০২ শতক জমি আর থিম পার্কের ২৮ শতক জমি দখল করে মাদরাসার নামে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। সাথে বেআইনী কাজ করছেন। আমি এর বিচার ও জমির সঠিক সুরাহা চাই।
জাফর আলী রমজানী বলেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ভাই মাদরাসার ভবনটিও নির্মাণ করে দিয়েছেন। অথচ তাকেও কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছেন সাহেদ আলী গংরা। এখন আবার থিম পার্কের মালিক আবু বাশার মোহাম্মদ শাহিদ এর জমিতে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করে জমি দখলের অপচেষ্টা করছেন। অথচ এই জমিতে মামলা চলমান। মামলা নং ৮৫/২০২৪। একারণে আমি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।
এব্যাপারে মাদরাসাটির সভাপতি মোঃ আব্দুর রউফ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বর্তমানে যে জমিতে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী তা মাদরাসার নয়। এমতাবস্থায় এই নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ অবৈধভাবে করা হচ্ছে। আমি গত মাসিক মিটিংয়ে এবিষয়ে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু সাহেদ আলী, নাসিমরা জোর পূর্বক তা করে চলেছেন। এটা ঠিক হচ্ছেনা।
মাদরাসার সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আব্দুর রউফ সভাপতি হলেও তিনি ব্যাপারটি বোঝেননি। তাই এমন মন্তব্য করেছেন। যে জমিতে ইটের গাথুনি দেয়া হচ্ছে তা মাদরাসার কি না? জানতে চাইলে তিনি সে বিষয়ে সঠিক কোন উত্তর না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর বার বার কল দেয়া হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

  • Related Posts

    শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি সৈয়দপুর শাখার উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ

    শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখার উদ্যোগে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার (১২ জানুয়ারি) রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ফাজিলপুর খিয়ারজুম্মা দোয়ালিপাড়া তকেয়া মদিনাতুল উলুম কওমী মাদ্রাসার…

    Continue reading
    সৈয়দপুরে বাউন্টের প্রথম নিউজলেটারের মোড়ক উন্মোচন

    নীলফামারীর সৈয়দপুরে সেনানিবাসে অবস্থিত বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি এর রিসার্চ এন্ড পাবলিকেশন সেল কর্তৃক প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নিউজলেটার মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি