ডিমলায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কিল্লা এখন ভূতের বাড়ী

নীলফামারীর ডিমলায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিস্তার চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামের আশ্রয় কেন্দ্রটি (সাইক্লোন সেন্টার) এখন ভূতের বাড়ী। উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ছাতুনামা গ্রামের কিল্লাপাড়ায় আশ্রয় কেন্দ্রটি নির্মাণ করেন ত্রাণ ও পুনর্বাাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
উপজেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মেজবাহুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ২০২২ সালের প্রথম দিকে মুজিব কিল্লাটি নির্মিত হয়। একই বছরের ১৩ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফ্রান্সের মাধ্যমে এর উদ্ধোধন করেন। আর এই ভবনের কাজটি বাস্তবায়ন করেন মেসার্স হায়দার এন্ড কোং নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, ফ্যান, লাইট, বিদ্যুৎ ও যাতায়তের রাস্তা না থাকায় বানভাসি মানুষের কোন কাজে আসছে না, কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আশ্রয় কেন্দ্রটি। ছাতুনামা গ্রামে পাঁচ বিঘা (১৫০ শতাংশ) জমির ওপরে নির্মিত ‘মুজিব কিল্লা’ এখন ভূতের বাড়ী।
সুত্র জানা যায়, এটি বি-প্যাটানের একটি স্থাপনা। সরকার প্রকল্পটির নাম দিয়েছিল ‘মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’। মূল ভবনটির আয়তন ৯ হাজার ৩১০ বর্গফুট। দুর্যোগ প্রশমিত এলাকার মানুষ ও তাদের জীবনরক্ষা, মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী সংরক্ষণ এবং গৃহপালিত পশু নিরাপদে রাখার জন্য ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
এছাড়াও বছরের অন্য সময় জাতীয় অনুষ্ঠানসহ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, শিশুদের খেলার মাঠ ও এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারী বেসকারী নানা প্রশিক্ষণ ও দূর্যোগে অস্থায়ী সেবাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে মাদকসেবিদের অভয়রণ্য, চলছে মাদকের আড্ডা।
আশ্রয় কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, আফসার আলী ও আব্দুল আজিজ জানান, মুজিব কিল্লার পূর্ব দিকে যাতায়তের জন্য একটি সিঁড়ি নির্মাণ করা হলেও সেখানে সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রবেশ করা যায় না। ধান ক্ষেতের আইল (মাল্লি) দিয়ে চলাচল করা গেলেও চারপাশে আবাদি জমির ভিতরে এটির অবস্থান। রাস্তা সংকটে সকল কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে।
সুত্র জানায়, নীলফামারী (ডোমার, ডিমলা) এক আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ডিমলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফতাব উদ্দিন সরকার এটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন এবং জায়গাটিও তিনি নির্বাচন করে দেন। এই কাজের দেখভালের দায়িত্ব পায় এমপির অনুশারীরা। এ ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে কল দিলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একরামুল হক জানান, দু’মাস আগে স্টোর রুম থেকে সোলার ও ব্যাটারী চুরি হলে তা ইউনিয়ন পরিসদের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। সেগুলো এখন আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার পরিবেশ না থাকায় ইউপি সদস্যর কাছে জমা রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার বন্যায় খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেলেও সেখানে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেনি। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই আশ্রয় কেন্দ্রটি এখন ভূতড়ে অবস্থায় পরিনত হয়েছে। যাতায়তের রাস্তা ছাড়া এটি নির্মাণ করে এলাকাবাসির লাভ কি হলো।
ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুর হোসেন জানান, এতো টাকা ব্যয়ে তৈরী করা মুজিব কিল্লাটি এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের কোন কাছে আসে নাই। সেখানে যাতায়াতের কোন রাস্তা না থাকায় অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। চরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের বাড়ী ঘর,যান মাল রক্ষায় নির্মিত এই মুজিব কিল্লা এখন মাদকের আখড়া। এটি ব্যবহারে অনুপযোগি হওয়ায় পানি বন্ধি মানুষ এখানে আশ্রয় নেয়নি। তিনি বলেন, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে কোন লোক না থাকায় সোলার ব্যাটারী ও অন্যান্য জিনিশপত্র চুরি হয়েছে। এগুলি উদ্ধারে আমাদের তৎপরতা চলছে। সরকারীভাবে দেখভাল করা হলে সাইক্লোন সেন্টারটি রক্ষা পেত।
উপজেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জানান, আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যাটারী, ফ্যান চুরি হয়েছে কিনা তা বলতে পারব না। তবে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আন্দোলনকারীরা কিছুটা ক্ষতি কয়েছে। বর্তমানে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেখা শুনা করছেন।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া জানান, মুজিব কিল্লার বরাদ্দ কত আমার জানা নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগের বরাদ্দ প্রকল্পে ছিল কি না তা জেনে বলতে হবে। ওই ইউনিয়নে জরুরী এক কাজে গিয়ে এক নজর আশ্রয় কেন্দ্রটি দেখে আসি। তবে ভিতরে লাইট ফ্যান দেখতে পাই।
জেলা ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কাশপিয়া তাসরিন জানান, শুনেছি জেলার ডিমলায় একটি সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে। যাতায়তের সংযোগ সড়ক আছে কিনা তাও আমার জানা নাই? আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এলাকাবাসির অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে দেশের ১৬ জেলায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের সিন্ধ্যান্ত গৃহিত হয়। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ২০২১-২২ অর্থ বছরে নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তার চরে ‘মুজিব কিল্লা’ নামের আশ্রয়ন কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়।।

  • Related Posts

    ডিমলায় রাতের আধারে জমি দখল-নিরুপায় স্কুল শিক্ষিকা

    নীলফামারীর ডিমলায় রাতের আধারে এক স্কুল শিক্ষিকার জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। জমি দখল করে সেখানে তাৎক্ষনিক খড়ের ঝুপড়ি নির্মাণ ও কিছু সুপাড়ি ও কলা গাছ রোপন করে দখলদাররা। ঘটনাটি ঘটেছে…

    Continue reading
    নীলফামারীতে বুড়ি তিস্তা নদীর অবৈধ দখলদারের হামলার শিকার পাউবো কর্মকর্তা-কর্মচারী

    নীলফামারীতে বুড়ি তিস্তা নদীর অবৈধ দখলদারদের হামলায় আহত হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চার কর্মকর্তা-কর্মচারী। এঘটনায় বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ডিমলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।পানি উন্নয়ন বোর্ডের অভিযোগ,…

    Continue reading

    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    মুক্ত মতামত

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    বিভ্রান্তিকর ও স্বার্থপরতার আন্দোলন!

    ‘রাজাকার’ ইস্যু বানিয়ে একই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    আজকের আন্দোলনকারীরা কি ২০১৮ এর ভুলটিই করবেন?

    নিয়োগ পরীক্ষায় পাস না করেও কি কোটা ব্যবস্থায় চাকরি পাওয়া যায়?

    কোটা পুনর্বহালে স্থিতাবস্থা মানে কি?

    প্রধানমন্ত্রীর সফরে পাঁচ মূলনীতির উন্নয়ন করতে চায় চীন

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটা ভাবা যেতে পারে

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি

    ভারত-বাংলাদেশ সামরিক চুক্তির লাভ-ক্ষতি